আদিত্য। আচ্ছা সেই ভালো, তা হলে আমি কি করব?
নীরজা। তুমি তোমার দোকান নিয়ে থাকো; সেখানে তোমার অফিসের কাজ তো কম নয়।
আদিত্য। তোমাকে নিয়ে থাকাও তা হলে নিষিদ্ধ।
নীরজা। হাঁ, সর্বদা কাছে থাকবার মতো সে আমি আর নেই— এখন আমি কেবল আর-একজনকে মনে করিয়ে দিতে পারি— তাতে লাভ কী?
আদিত্য। আচ্ছা বেশ। যখন তুমি আমাকে সহ্য করতে পারবে, তখনি আসব। ডেকে পাঠিয়ো আমাকে। আজ সাজিতে তোমার জন্য গন্ধরাজ এনেছি, রেখে যাই তোমার বিছানায়, কিছু মনে কোরো না।
নীরজা। না, যেয়ো না, একটু বোসো।
জানো এ ফুলের নাম।
আদিত্য। না, জানি নে।
নীরজা। আমি জানি। বলব, পেট্যুনিয়া। তুমি মনে করো আমি কিছু জানি নে, মুর্খু আমি।
আদিত্য। (হেসে) সহধর্মিণী তুমি, যদি মুর্খ হও অন্তত আমার সমান মূর্খ। আমাদের জীবনে মূর্খতার কারবার আধাআধি ভাগে চলছে।
নীরজা। সে কারবার আমার ভাগ্যে এইবারে শেষ হয়ে এল। ঐ যে দারোয়ানটা ঐখানে বসে তামাক কুটছে ও থাকবে দেউড়িতে, কিছুদিন পরে আমি থাকব না। ঐ যে গোরুর গাড়িটা পাথুরে কয়লা আজাড় করে দিয়ে খালি ফিরে যাচ্ছে ওর যাতায়াত চলবে রোজ রোজ, কিন্তু চলবে না আমার এই হৃদ্যন্ত্রটা।
একেবারেই থাকব না,কিছুই থাকব না? বলো আমাকে, তুমি তো অনেক বই পড়েছ, বলো-না আমাকে সত্যি করে।
আদিত্য। যাদের বই পড়েছি তাদের বিদ্যে যতদূর আমারও ততদূর। যমের দরজার কাছটাতে এসে থেমেছি আর এগোয় নি।
নীরজা। বলো-না তুমি কি মনে করো। একটুও থাকব না? এতটুকুও না?
আদিত্য। এখন আছি এটাই যদি সম্ভব হয়, তখন থাকব সেও সম্ভব।
নীরজা। নিশ্চয়ই সম্ভব, ঐ বাগানটা সম্ভব, আর আমিই হব অসম্ভব, এ হতেই পারে না, কিছুতেই না। সন্ধেবেলায় অমনি করেই অস্পষ্ট আলোয় কাকেরা ফিরবে বাসায়, এমনি করেই দুলবে সুপুরিগাছের ডাল ঠিক আমারই চোখের সামনে। সেদিন তুমি মনে রেখো, আমি আছি, আমি আছি, সমস্ত বাগানময় ‘আমি আছি’। মনে কোরো বাতাস যখন তোমার চুল ওড়াচ্ছে আমার আঙুলের ছোঁওয়া আছে তাতে। বলো মনে করবে।