পূর্বদিনে পূরবালা তাহার মাতার সহিত কাশী হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে। অক্ষয় কহিলে, “দেবী, যদি অভয় দাও তো একটি প্রশ্ন আছে।”
পুরবালা। কী শুনি।
অক্ষয়। শ্রীঅঙ্গে কৃশতার তো কোনো লক্ষণ দেখছি নে।
পুরবালা। শ্রীঅঙ্গ তো কৃশ হবার জন্যে পশ্চিমে বেড়াতে যায় নি।
অক্ষয়। তবে কি বিরহবেদনা বলে জিনিসটা মহাকবি কালিদাসের সঙ্গে সহমরণে মরেছে?
পুরবালা। তার প্রমাণ তুমি। তোমারও তো স্বাস্থ্যের বিশেষ ব্যাঘাত হয় নি দেখছি।
অক্ষয়। হতে দিল কই? তোমার তিন ভগ্নী মিলে অহরহ আমার কৃশতা নিবারণ করে রেখেছিল– বিরহ যে কাকে বলে সেটা আর কোনোমতেই বুঝতে দিলে না।–
গান। পিলু
বিরহে মরিব বলে ছিল মনে পণ।
কে তোরা বাহুতে বাঁধি করিলি বারণ?
ভেবেছিনু অশ্রুজলে ডুবিব অকূল তলে,
কাহার সোনার তরী করিল তারণ?
প্রিয়ে, কাশীধামে বুঝি পঞ্চশর ত্রিলোচনের ভয়ে এগোতে পারেন না?
পুরবালা। তা হতে পারে, কিন্তু কলকাতায় তো তাঁর যাতায়াত আছে।
অক্ষয়। তা আছে– কোম্পানির শাসন তিনি মানেন না, আমি তার প্রমাণ পেয়েছি।
নীরবালা। দিদি!
অক্ষয়। এখন দিদি বৈ আর কথা নেই– অকৃতজ্ঞ! দিদি যখন বিচ্ছেদদহনে উত্তরোত্তর তপ্তকাঞ্চনের মতো শ্রী ধারণ করছিলেন তখন তোমাদের কটিকে সুশীতল করে রেখেছিল কে?
নীরবালা। শুনছ দিদি! এমন মিথ্যে কথা! তুমি যতদিন ছিলে না আমাদের একবার ডেকেও জিজ্ঞাসা করেন নি– কেবল চিঠি লিখেছেন আর টেবিলের উপর দুই পা তুলে দিয়ে বই হাতে করে পড়েছেন। তুমি এসেছ এখন আমাদের নিয়ে গান হবে, ঠাট্টা হবে, দেখাবেন যেন–
নৃপবালা। দিদি, তুমিও তো, ভাই, এতদিন আমাদের একখানিও চিঠি লেখ নি?
পুরবালা। আমার কি সময় ছিল ভাই? মাকে নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।
অক্ষয়। যদি বলতে ‘তোদের ভগ্নীপতির ধ্যানে নিমগ্ন ছিলুম’ তা হলে কি লোকে নিন্দে করত?
নীরবালা। তা হলে ভগ্নীপতির আস্পর্ধা আরো বেড়ে যেত। মুখুজ্যেমশায়, তুমি তোমার বাইরের ঘরে যাও-না। দিদি এতদিন