বটু। যেতে দিলে না, মেরে ফিরিয়ে দিলে।
অভিজিৎ। কী হয়েছে, বটু— তোমার কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে যে!
বটু। আমি সকলকে সাবধান করতে বেরিয়েছিলুম, বলছিলুম, ‘যেয়ো না ও পথে, ফিরে যাও।’
অভিজিৎ। কেন, কী হয়েছে?
বটু। জান না যুবরাজ? ওরা যে আজ যন্ত্রবেদীর উপর তৃষ্ণারাক্ষসীর প্রতিষ্ঠা করবে। মানুষ-বলি চায়।
সঞ্জয়। সে কী কথা?
বটু। সেই বেদী গাঁথবার সময় আমার দুই নাতির রক্ত ঢেলে দিয়েছে। মনে করেছিলুম পাপের বেদী আপনি ভেঙে পড়ে যাবে। কিন্তু এখনো তো ভাঙল না, ভৈরব তো জাগলেন না।
অভিজিৎ। ভাঙবে। সময় এসেছে।
বটু। (কাছে আসিয়া চুপে চুপে) তবে শুনেছ বুঝি? ভৈরবের আহ্বান শুনেছ?
অভিজিৎ। শুনেছি।
বটু। সর্বনাশ! তবে তো তোমার নিষ্কৃতি নেই।
অভিজিৎ। না, নেই।
বটু। এই দেখছ না, আমার মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে, সর্বাঙ্গে ধুলো। সইতে পারবে কি,যুবরাজ,যখন বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে যাবে!
অভিজিৎ। ভৈরবের প্রসাদে সইতে পারব।
বটু। চারিদিকে সবাই যখন শত্রু হবে? আপন লোক যখন ধিক্কার দেবে?
অভিজিৎ। সইতেই হবে।
বটু। তাহলে ভয় নেই?
অভিজিৎ। না ভয় নেই।
বটু। বেশ বেশ। তাহলে বটুকে মনে রেখো। আমিও ঐ পথে। ভৈরব আমার কপালে এই-যে রক্ততিলক এঁকে দিয়েছেন তার থেকে অন্ধকারেও আমাকে চিনতে পারবে।
উদ্ধব। নন্দিসংকটের পথ কেন খুলে দিলে যুবরাজ?
অভিজিৎ। শিবতরাইয়ের লোকেদের নিত্যদুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচাবার জন্যে।
উদ্ধব। মহারাজ তো তাদের সাহায্যের জন্যে প্রস্তুত, তাঁর তো দয়ামায়া আছে।
অভিজিৎ। ডান-হাতের কার্পণ্য দিয়ে পথ বন্ধ করে বাঁ-হাতের বদান্যতায় বাঁচানো যায় না। তাই ওদের অন্ন-চলাচলের পথ খুলে দিয়েছি। দয়ার উপর নির্ভর করার দীনতা আমি দেখতে পারি নে।
উদ্ধব। মহারাজ বলেন, নন্দিসংকটের গড় ভেঙে দিয়ে তুমি উত্তরকূটের ভোজনপাত্রের তলা খসিয়ে দিয়েছ।
অভিজিৎ। চিরদিন শিবতরাইয়ের অন্নজীবী হয়ে থাকবার দুর্গতি থেকে উত্তরকূটকে মুক্তি দিয়েছি।