ধনঞ্জয়। ওরে, আজও মারকে জিততে পারলি নে? আজও লাগে?
২। রাজার দেউড়িতে ধরে নিয়ে মার! বড়ো অপমান!
ধনঞ্জয়। তোদের মানকে নিজের কাছে রাখিস নে; ভিতরে য়ে ঠাকুরটি আছেন তাঁরই পায়ের কাছে রেখে আয়, সেখানে অপমান পৌঁছোবে না।
গণেশ। আর সহ্য হয় না, হাত দুটো নিশ্পিশ্ করছে।
ধনঞ্জয়। তাহলে হাত দুটো বেহাত হয়েছে বল্।
গণেশ। ঠাকুর, একবার হুকুম করো ওই ষণ্ডামার্কা চণ্ডপালের দণ্ডটা খসিয়ে নিয়ে মার কাকে বলে একবার দেখিয়ে দিই।
ধনঞ্জয়। মার কাকে না বলে তা দেখাতে পারিস নে? জোর বেশি লাগে বুঝি? ঢেউকে বাড়ি মারলে ঢেউ থামে না, হালটাকে স্থির করে রাখলে ঢেউ জয় করা যায়।
৪। তাহলে কী করতে বল?
ধনঞ্জয়। মার জিনিসটাকেই একেবারে গোড়া ঘেঁষে কোপ লাগাও।
৩। সেটা কী করে হবে প্রভু?
ধনঞ্জয়। মাথা তুলে যেমনি বলতে পারবি লাগছে না,অমনি মারের শিকড় যাবে কাটা।
২। লাগছে না বলা যে শক্ত।
ধনঞ্জয়। আসল মানুষটি যে, তার লাগে না, সে যে আলোর শিখা। লাগে জন্তুটার, সে যে মাংস,মার খেয়ে কেঁই-কেঁই করে মরে। হাঁ করে রইলি যে? কথাটা বুঝলি নে?
২। তোমাকেই আমরা বুঝি, কথা তোমার নাই বা বুঝলুম।
ধনঞ্জয়। তা হলেই সর্বনাশ হয়েছে।
গণেশ। কথা বুঝতে সময় লাগে, সে তর সয় না; তোমাকে বুঝে নিয়েছি, তাতেই সকাল-সকাল তরে যাব।
ধনঞ্জয়। তার পরে বিকেল যখন হবে? তখন দেখবি কূলের কাছে তরী এসে ডুবেছে। যে কথাটা পাকা, সেটাকে ভিতর থেকে পাকা করে না যদি বুঝিস তো মজবি।
গণেশ। ও কথা বলো না, ঠাকুর। তোমার চরণাশ্রয় যখন পেয়েছি তখন যে করে হোক বুঝেছি।
ধনঞ্জয়। বুঝিস নি যে তা আর বুঝতে বাকি নেই। তোদের চোখ রয়েছে রাঙিয়ে, তোদের গলা দিয়ে সুর বেরোল না। একটু সুর ধরিয়ে দেব?
এমনি করেই মারো, মারো।
ওরে ভীতু, মার এড়াবার জন্যই তোরা হয় মরতে নয় পালাতে থাকিস, দুটো একই কথা। দুটোতেই পশুর দলে ভেড়ায়, পশুপতির দেখা মেলে না।