পুব হাওয়া কয়, ‘ওর যে সময় গেল চলে’,
শরৎ বলে, ‘ভয় কী সময় গেল বলে,
বিনা কাজে আকাশমাঝে কাটবে বেলা
অসময়ের খেলা খেলে।’
কালো মেঘের আর কি আছে দিন।
ও যে হল সাথিহীন।
পুব হাওয়া কয়, ‘কালোর এবার যাওয়াই ভালো’,
শরৎ বলে, ‘মিলবে যুগল কালোয় আলো,
সাজবে বাদল সোনার সাজে আকাশ মাঝে
কালিমা ওর ঘুচিয়ে ফেলে।'
নটরাজ। শরতের প্রথম প্রত্যুষে ঐ যে শুকতারা দেখা দিল অন্ধকারের প্রান্তে। মহারাজ দয়া করবেন, কথা কবেন না।
রাজা। নটরাজ, তুমিও তো কথা কইতে কসুর কর না।
নটরাজ। আমার কথা যে পালারই অঙ্গ।
রাজা। আর আমার হল তার বাধা। তোমার যদি হয় জলের ধারা, আমার না হয় হল নুড়ি, দুইয়ে মিলেই তো ঝরনা। সৃষ্টিতে বাধা যে প্রকাশেরই অঙ্গ। যে বিধাতা রসিকের সৃষ্টি করেছেন অরসিক তাঁরই সৃষ্টি, সেটা রসেরই প্রয়োজনে।
নটরাজ। এবার বুঝেছি আপনি ছদ্মরসিক, বাধার ছলে রস নিংড়ে বের করেন। আর আমার ভয় রইল না। গীতাচার্য গান
ধরো।
দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলি চায়
প্রভাতের কিনারায়।
ডাক দিয়েছে রে শিউলি ফুলেরে
আয় আয় আয়।
ও যে কার লাগি জ্বালে দীপ,
কার ললাটে পরায় টিপ,
ও যে কার আগমনী গায়—
আয় আয় আয়।
জাগো জাগো, সখী,
কাহার আশায় আকাশ উঠিল পুলকি।
মালতীর বনে বনে
ওই শুন ক্ষণে ক্ষণে
কহিছে শিশিরবায়
আয় আয় আয়।
নটরাজ। ঐ দেখুন শুকতারার ডাক পৃথিবীর বনে পৌঁছেছে। আকাশের আলোকের যে লিপি সেই লিপিটিকে ভাষান্তরে লিখে