কুমুদিনী। তা হলে এখনি তার প্রমাণ দাও।
বিপ্রদাস। হাতে হাতে তোর জন্যে দুঃখ বানাতে হবে নাকি?
কুমুদিনী। না, বানাবার দরকার নেই। আমি জানি আজ তোমাকে ব্যথা লেগেছে। আমার কাছে তুমি লুকোতে পারবে না।
বিপ্রদাস। আমার ব্যথার হাল খবরটা নাহয় তোর কাছ থেকেই শুনে নিই।
কুমুদিনী। আজ বিলেতের ডাকে তুমি ছোড়দাদার কাছ থেকে চিঠি পেয়েছ, সেই চিঠিতে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে।
বিপ্রদাস। তুই আমার সুখদুঃখের ব্যারোমিটার হয়ে উঠলি দেখছি।
কুমুদিনী। না দাদা, কথাটা উড়িয়ে দিয়ো না।
বিপ্রদাস। তাই তো বটে। প্রতিদিনের যত কাঁটা খোঁচা সবই তোর জন্যে জমিয়ে রাখতে হবে? এমন ভীষণ দাদাগিরি নাই-বা করলেম।
কুমুদিনী। আমাকে তুমি ছেলেমানুষ বলেই ঠিক করেছ। সত্যিই ছিলুম ছেলেমানুষ, নুরনগরে যতদিন পূর্বপুরুষের জীর্ণ ঐশ্বর্যের আওতায় ছিলুম। তার ভিত ভাঙতেই আজ একদিনেই যেন আমার বয়স বেড়ে গেছে। আজ আমাকে স্নেহের আড়ালে ভুলিয়ে রেখো না, আজ তোমার দুঃখের অংশ আমাকে দাও, তাতেই আমার ভালো হবে। বলো, ছোড়দাদা কী লিখেছেন।
বিপ্রদাস। সুবোধ টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে, অত টাকা দেবার শক্তি আমার নেই।
কুমুদিনী। দাদা, একটা কথা বলি, রাগ করবে না বলো।
বিপ্রদাস। রাগ করবার মতো কথা হলে, রাগ না করতে পারলে যে দম ফেটে মরব।
কুমুদিনী। না দাদা, ঠাট্টা নয়। শোনো আমার কথা। মায়ের গয়না তো আমার জন্যে আছে, তাই নিয়ে—
বিপ্রদাস। চুপ, চুপ, তোর গয়নাতে কি আমরা হাত দিতে পারি?
কুমুদিনী। আমি তো পারি।
বিপ্রদাস। না, এখন তুইও পারিস নে। থাক্ সে-সব কথা। যা, তোর সংস্কৃত পড়া তৈরি করতে যা, অনেকদিন পড়া কামাই গেছে।
কুমুদিনী। না দাদা, ‘না’ বোলো না, আমার কথা রাখতেই হবে।
বিপ্রদাস। মতের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবি তুই? তোর শাসনে ‘না’কে ‘হাঁ’ করতে হবে?
কুমুদিনী। আমার গয়না সার্থক হোক, দিক তোমার ভাবনা ঘুচিয়ে।
বিপ্রদাস। সাধে তোকে বলি বুড়ি! তোর গয়না নিয়ে আমার ভাবনা ঘোচাব আমি, এমন কথা ভাবতে পারলি কোন্ বুদ্ধিতে? ওই-যে দেওয়ানজি আসছেন।
কুমুদিনী। আমি তা হলে যাই।
বিপ্রদাস। না, যাবি কেন? এখন থেকে সব কথা তোর সামনেই হবে।
দেওয়ানজির প্রবেশ
বিপ্রদাস। ভূষণ রায় করিমহাটি তালুক পত্তনি নিতে চেয়েছিল,না? কত পণ দেবে?
দেওয়ানজি। বিশ হাজার পর্যন্ত উঠতে পারে।
বিপ্রদাস। একবার ভূষণ রায়কে তলব দিয়ে পাঠাও। কথাবার্তা কইতে চাই।
দেওয়ানজি। বিশেষ কি তাড়া আছে?