এসো আমার ঘরে,
বাহির হয়ে এসো তুমি যে আছ অন্তরে।
দুঃখসুখের দোলে এসো,
প্রাণের হিল্লোলে এসো,
স্বপনদুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে
মুগ্ধ এ চোখে।
এবার ফুলের প্রফুল্লরূপ এসো বুকের 'পরে॥
রাজা বলে, “আমার গানেই তুমি আমাকে দেখো। আগে দেখে নাও অন্তরে,বাইরে দেখবার দিন আসবে তার পরে। নইলে ভুল হবে,ছন্দ যাবে ভেঙে।”
তোমার চপল আঁখি বনের পাখি বনে পালায়।
ওগো, হৃদয়ে যবে মোহন রবে বাজবে বাঁশি
তখন আপনি সেধে ফিরবে, কেঁদে, পরবে ফাঁসি—
তখন ঘুচবে ত্বরা,ঘুরিয়া মরা হেথা হোথায়।
চেয়ে দেখিস না রে হৃদয়দ্বারে কে আসে যায়—
তোরা শুনিস কানে বারতা আনে দখিন বায়।
আজি ফুলের বাসে সুখের হাসে আকুল গানে
চির বসন্ত যে তোমারি খোঁজে এসেছে প্রাণে,
তারে বাহিরে খুঁজি ফিরিছ বুঝি পাগলপ্রায়—
আহা আজি সে আঁখি বনের পাখি বনে পালায়॥
অন্ধকারে বীণা বাজে। অন্ধকারে গান্ধর্বীকলার নৃত্যে বধূকে বর প্রদক্ষিণ করে। সেই নৃত্যকলা নির্বাসনের সঙ্গিনী হয়ে এসেছে তার মর্তদেহে। নৃত্যের বেদনা রানীর বক্ষে আঘাত করে;নিশীথরাত্রে সমুদ্রে জোয়ার এলে তার ঢেউ যেমন লাগে তটভূমিতে,অশ্রুতে দেয় প্লাবিত করে।
একদিন রাত্রির তৃতীয় প্রহর,শুকতারা পূর্বগগনে;কমলিকা তার সুগন্ধি এলোচুলে দিলে রাজার দুই পা ঢেকে;বললে, “আদেশ করো আজ উষার প্রথম আলোকে তোমাকে প্রথম দেখব। নইলে আমি বিদায় নিয়ে যাই,রেখে যাই আমার কান্না এই অন্ধকারের বুকে— যতক্ষণ না আমাকে ফিরে ডেকে আন তোমার আলোর সভায়।”
আমি এলেম তোমার দ্বারে,
ডাক দিলেম অন্ধকারে।
আগল ধরে দিলেম নাড়া, প্রহর গেল পাই নি সাড়া,
দেখতে পেলেম না তোমারে।