বড়ো থাকি কাছাকাছি,
তাই ভয়ে ভয়ে আছি।
নয়ন বচন কোথায় কখন বাজিলে বাঁচি না-বাঁচি।
শৈলবালা। এই কি তোমার গান গাবার সময় হল।
অক্ষয়। কী করব ভাই। রোশনচৌকি বাজাতে শিখি নি, তা হলে ধরতুম। বল কী। শুভকর্ম! দুই শ্যালীর উদ্বাহবন্ধন! কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কেন।
শৈলবালা। বৈশাখ মাসের পর আসছে বছরে অকাল পড়বে, আর বিয়ের দিন নেই।
পুরবালা। তোরা আগে থাকতে ভাবিস কেন শৈল, পাত্র আগে দেখা যাক তো।
জগত্তারিণী। বাবা অক্ষয়।
অক্ষয়। কী মা।
জগত্তারিণী। তোমার কথা শুনে আর তো মেয়েদের রাখতে পারি নে।
শৈলবালা। মেয়েদের রাখতে পার না বলেই কি মেয়েদের ফেলে দেবে মা।
জগত্তারিণী। ঐ তো। তোদের কথা শুনলে গায়ে জ্বর আসে। বাবা অক্ষয়, শৈল বিধবা মেয়ে, ওকে এত পড়িয়ে, পাস করিয়ে, কী হবে বলো দেখি। ওর এত বিদ্যের দরকার কী।
অক্ষয়। মা, শাস্ত্রে লিখেছে, মেয়েমানুষের একটা-না-একটা কিছু উৎপাত থাকা চাই— হয় স্বামী, নয় বিদ্যে, নয় হিস্টিরিয়া। দেখো-না, লক্ষ্মীর আছেন বিষ্ণু, তাঁর আর বিদ্যের দরকার হয় নি, তাই স্বামীটিকে এবং পেঁচাটিকে নিয়েই আছেন; আর সরস্বতীর স্বামী নেই, কাজেই তাঁকে বিদ্যে নিয়ে থাকতে হয়।
জগত্তারিণী। তা, যা বল বাবা, আসছে বৈশাখে মেয়েদের বিয়ে দেবই।
পুরবালা। হাঁ মা, আমারও সেই মত। মেয়েমানুষের সকাল সকাল বিয়ে হওয়াই ভালো।
অক্ষয়। (জনান্তিকে) তা তো বটেই। বিশেষত যখন একাধিক স্বামী শাস্ত্রে নিষেধ তখন সকাল সকাল বিয়ে করে সময়ে পুষিয়ে নেওয়া চাই।
পুরবালা। আঃ কী বকছ। মা শুনতে পাবেন।
জগত্তারিণী। রসিককাকা আজ পাত্র দেখাতে আসবেন। তা, চল্ মা পুরি, তাদের জলখাবার ঠিক করে রাখিগে।
শৈলবালা। আর তো দেরি করা যায় না মুখুজ্জেমশায়। এইবার তোমার সেই চিরকুমার-সভার বিপিনবাবু শ্রীশবাবুকে বিশেষ একটু তাড়া না দিলে চলছে না। আহা, ছেলে দুটি চমৎকার। আমাদের নেপো আর নীরর সঙ্গে দিব্যি মানায়। তুমি তো চৈত্রমাস যেতে না-যেতে আপিস ঘাড়ে করে সিমলে যাবে, এবারে মাকে ঠেকিয়ে রাখা শক্ত হবে।