অক্ষয়। কিন্তু, তাই ব’লে সভাটিকে হঠাৎ অসময়ে তাড়া লাগালে যে চমকে যাবে। ডিমের খোলা ভেঙে ফেললেই কিছু পাখি বেরোয় না। যথোচিত তা দিতে হবে, তাতে সময় লাগে।
শৈলবালা। বেশ তো, তা দেবার ভার আমি নেব মুখুজ্জেমশায়।
অক্ষয়। আর-একটু খোলসা করে বলতে হচ্ছে।
শৈলবালা। ঐ তো দশ নম্বরে ওদের সভা? আমাদের ছাদের উপর দিয়ে দেখন-হাসির বাড়ি পেরিয়ে ওখানে ঠিক যাওয়া যাবে। আমি পুরুষবেশে ওদের সভার সভ্য হব, তার পরে সভা কতদিন টেঁকে আমি দেখে নেব।
অক্ষয়। তা হলে জন্মটা বদলে নিয়ে আর-একবার সভ্য হব। একবার তোমার দিদির হাতে নাকাল হয়েছি, এবার তোমার হাতে। কুমার হবার সুখটাই ঐ— কটাক্ষবাণগুলোকে লক্ষ্যভেদ করবার সুযোগ দেওয়া যায়।
শৈলবালা। ছি মুখুজ্জেমশায়, তুমি সেকেলে হয়ে যাচ্ছ। ঐ-সব নয়নবাণ-টানগুলোর এখন কি আর চলন আছে। যুদ্ধবিদ্যার যে এখন অনেক বদল হয়ে গেছে।
নীরবালা। (শৈলকে জড়াইয়া ধরিয়া) মেজদিদিভাই, আজ কারা আসবে বল্ তো।
নৃপবালা। মুখুজ্জেমশায়, আজ কি তোমার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ আছে। জলখাবারের আয়োজন হচ্ছে কেন।
অক্ষয়। ঐ তো! বই পড়ে পড়ে চোখ কানা করলে— পৃথিবীর আকর্ষণে উল্কাপাত কী করে ঘটে সে-সমস্ত লাখ-দুলাখ ক্রোশের খবর রাখ, আর আজ ১৮ নম্বর মধুমিস্ত্রির গলিতে কার আকর্ষণে কে এসে পড়ছে সেটা অনুমান করতেও পারলে না?
নীরবালা। বুঝেছি ভাই সেজদিদি। তোর বর আসছে ভাই, তাই সকালবেলা আমার বাঁ চোখ নাচছিল।
নৃপবালা। তোর বাঁ চোখ নাচলে আমার বর আসবে কেন।
নীরবালা। তা ভাই, আমার বাঁ চোখটা নাহয় তোর বরের জন্যে নেচে নিলে, তাতে আমি দুঃখিত নই। কিন্তু মুখুজ্জেমশায়, জলখাবার তো দুটি লোকের জন্যে দেখলুম, সেজদিদি কি স্বয়ম্বরা হবে নাকি।
অক্ষয়। আমাদের ছোড়দিদিও বঞ্চিত হবেন না।
নীরবালা। আহা মুখুজ্জেমশায়, কী সুসংবাদ শোনালে। তোমাকে কী বকশিশ দেব। এই নাও আমার গলার হার, আমার দু হাতের বালা।
শৈলবালা। আঃ ছি, হাত খালি করিস নে।
নীরবালা। আজ আমাদের বরের অনারে পড়ার ছুটি দিতে হবে মুখুজ্জেমশায়।
নৃপবালা। আঃ, কী বর বর করছিস। দেখো তো ভাই মেজদিদি।
অক্ষয়। ওকে ঐজন্যেই তো বর্বরা নাম দিয়েছি। অয়ি বর্বরে, ভগবান তোমাদের কটি সহোদরাকে এই একটি অক্ষয় বর দিয়ে রেখেছেন, তবু তৃপ্তি নেই?
নীরবালা। সেইজন্যেই তো লোভ বেড়ে গেছে।