প্রজা। তোমার সাদা মন, তুমি বুঝবে না — ওর যে কী মতলব ছিল তা বোঝাই যাচ্ছে।
ধনঞ্জয়। সাদা মনে বোঝা যায় না, ময়লা মনে বোঝা সহজ হয়, এ কথা নতুন শোনা গেল। বিশ্বাস নেই, উপর থেকে দেখিস দিঘির পানা, বিশ্বাস করে নীচে ডুব মারিস, দেখবি ডুব-জল। তোরা ডাঙা থেকেই মুখ ফিরিয়ে যাস, আমি না তলিয়ে দেখে ছাড়ি নে।
প্রজা। প্রভু, রাগ যে হয়।
ধনঞ্জয়। সেইজন্যেই সংসারে কেবল রাগীকেই দেখিস- না রাগতিস, তা হলে যে রাগে না তাকেও দেখতে পেতিস।
পাঠানের পুনঃপ্রবেশ
বসন্ত। এই-যে খাঁ-সাহেব ফিরেছে। তুমি যে ফারসি বয়েদ্গুলি শুনিয়েছিলে, ওগুলি আমাকে লিখে দিতে
হবে।
পাঠান। দেব হুজুর, কিন্তু একটা কথা নিবেদন করি। ( প্রজাদিগকে দেখাইয়া) এই এদের সরে যেতে বলো।
প্রজা। না, সে হবে না। আমরা ওঁকে ফেলে যাব না।
ধনঞ্জয়। কেন যাবি নে রে? ভারি অহংকার তোদের দেখি। তোরা হলি রক্ষাকর্তা, না?
প্রজা। তুমি যদি হুকুম কর তো যাই।
ধনঞ্জয়। রক্ষা করবার যদি দরকার হয়, খাঁ-সাহেব একলা রক্ষা করতে পারবেন।
[ প্রজাদের প্রস্থান
পাঠান। মহারাজ, আমাকেই রক্ষা করো।
বসন্ত। সে কী কথা? কিছু বিপদ হয়েছে?
পাঠান। হয়েছে। আমি যদি আজ যশোরে ফিরে যাই, আমার প্রাণ থাকবে না।
বসন্ত। সর্বনাশ! কেন, কী অপরাধ করেছ?
পাঠান। প্রতাপাদিত্য রাজা কাল যখন আমাদের দুই ভাইকে রওনা করে দিলেন, তখন পথের মধ্যে আপনাকে খুন করবার হুকুম ছিল।
বসন্ত। কী বল খাঁ-সাহেব?
পাঠান। হাঁ, কিন্তু গোপনে। গোপনও রইল না, তা ছাড়া আপনাকে মারা আমার দ্বারা হবে না, মনিবের
হুকুমেও না। এখন আপনার মেহেরবানি চাই।
বসন্ত। এখনই চলে যাও রায়গড়ে। তোমার কোনো ভয় নেই।
[ সেলাম করিয়া পাঠানের প্রস্থান
বুকে বড়ো বাজল ঠাকুর!
ধনঞ্জয়। বাজবে বৈকি ভাই। ভালোবাস যে — না বাজলে কি ভালো হত?
গান
কাঁদালে তুমি মোরে ভালোবাসারি ঘায়ে —
নিবিড় বেদনাতে পুলক লাগে গায়ে।