বসন্ত। আমি একবাব প্রতাপের কাছে যাই।
উদয়। এখন কিছু বোলো না- উলটো হবে। আগে দেখি মহারাজ কী হুকুম দেন।
সুরমা। হুকুম যাই দিন, এখনই যশোর ছেড়ে ওঁদের পালানো চাই।
রামমোহন মালের প্রবেশ
রামমোহন। ( বিভার প্রতি) তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি মা, ঘরে দেখতে পেলুম না, তাই এখানে এলুম।
বিভা। ( সভয়ে) কেন, কেন, কী হয়েছে!
রামমোহন। কিছুই হয় নি। আজ কতকাল পরে মায়ের দেখা পেয়েছি। চারজোড়া শাঁখা এনেছি তুমি পরো,
আমি দেখে যাই।
উদয়। রামমোহন, তোমাদের নৌকো সব তৈরি আছে?
রামমোহন। এখনই কিসের তৈরি যুবরাজ, কতদিন পরে আমাদের আসা, এখন তো শিগগির মাকে ছেড়ে
যাচ্ছি নে।
বিভা। মোহন, এখনই নৌকা তৈরি কর্ গে-একটুও দেরি করিস নে।
রামমোহন। কেন মা?
বিভা। বিপদ ঘটিয়েছে-তুই তো সব জানিস। ওই-যে ভাঁড় এসেছিল অন্তঃপুরে। সে কথা মহারাজের কানে গিয়েছে।
রামমোহন। বেশ তো, এখনই তার মুণ্ডু নেন না- তার নোংরা মুখটা বন্ধ হলে আমরাও বাঁচি। আমি ধরে এনে দেব তাকে-ভাবনা নেই।
উদয়। রামমোহন, সে কীটটাকে কেউ ছোঁবেও না, তার চেয়ে বড়ো বিপদের ভয় আছে। তোমাদের সব চেয়ে বড়ো যে ছিপ নৌকো তার দাঁড়ি কত?
রামমোহন। চৌষট্টি জন।
উদয়। সেই নৌকোটা আমার এই জানলার সামনের ঘাটে এখনই তৈরি করে আনো। আজ রাত্তিরেই কোনোমতে রওনা করে দিতে হবে।
রামমোহন। দেরি হবে না যুবরাজ, দণ্ড দুয়েকের মধ্যে সব তৈরি করে রেখে দেব। কী করতে হবে বলে দাও।
উদয়। এই জানলা দিয়ে তাঁকে নাবিয়ে দিতে হবে, তার পরে রাতারাতি তোরা দাঁড় টেনে চলে যাবি।
[ রামমোহনের প্রস্থান বিভা বসিয়া পড়িয়া মুখে অঞ্চল দিয়া রোদন
বসন্ত। দিদি, ভয় করিস নে, ভগবানের কৃপায় সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বেঁচে থাকতে তোর ভয় নেই রে।
বিভা। ভয় না, দাদামশায়, লজ্জা! ছি ছি, কী লজ্জা! রাজার ছেলে হয়ে এমন ব্যবহার তো আমি
ভাবতে পারি নে। জন্মের মতো আমার যে মাথা হেঁট হয়ে গেল।
বসন্ত। এখন ও-সব কথা ভাবিস নে, আপাতত —
বিভা। অপরাধ করলে আমি নিজে মহারাজের কাছে মাপ চাইতে যেতুম। কিন্তু এ যে তারও বেশি। এ যে
নীচতা। আমার মাপ চাইবার মুখ রইল না।