যতীন। গানে কোন্ উৎসবের কথাটা আছে জানিস, হিমি?
হিমি। জানি নে।
যতীন। আহা, আন্দাজ কর্-না।
হিমি। আমি আন্দাজ করতে পারি নে।
যতীন। আমি পারি। যেদিন তোর বিয়ে হবে সেদিন উৎসবের ভোরবেলা থেকে—
হিমি। থাক্ দাদা, থাক্।
যতীন। আমি যেন তার বাঁশি শুনতে পাচ্ছি, ভৈরবীতে বাজছে। আমি লিখে দিয়েছি তোর বিয়ের খরচের জন্যে—
হিমি। দাদা, তবে আমি যাই।
যতীন। না, না, বোস্। কিন্তু গৃহপ্রবেশের দিন আমার হয়েই তোকে সব সাজাতে হবে— মনে রাখিস, সাদা পদ্ম যত পাওয়া যায়— ঘরে যে-আসন তৈরি হবে তার উপরে আমার বিয়ের সেই লাল বেনারসী চাদরটা—
শম্ভু। ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁকে কি আজ রাত্রে থাকতে হবে।
মাসি। হাঁ, থাকতে হবে।
যতীন। কিন্তু আজ ঘুমের ওষুধ না। তাতে আমার ঘুমও যায় ঘুলিয়ে, জাগাও যায় ঘুলিয়ে। বৈশাখদ্বাদশীর রাত্রে আমাদের বিয়ে হয়েছিল, মাসি। কাল সেই তিথি। মণিকে সেই কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই। দুমিনিটের জন্যে ডেকে দাও। চুপ করে রইলে যে। আমার মন তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে বলেই এই দুরাত আমার ঘুম হয় নি। আর দেরি নয়, এর পরে আর সময় পাব না। না মাসি, তোমার ঐ কান্না আমি সইতে পারি নে। এতদিন তো বেশ শান্ত ছিলে। আজ কেন—
মাসি। ওরে যতীন, ভেবেছিলুম আমার সব কান্না ফুরিয়ে গেছে— আজ আর পারছি নে।
যতীন। হিমি তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন।
মাসি। বিশ্রাম করতে গেল। একটু পরেই আবার আসবে।
যতীন। মণিকে ডেকে দাও।
মাসি। যাচ্ছি বাবা, শম্ভু দরজার কাছে রইল। যদি কিছু দরকার হয় ওকে ডেকো।
পাশের ঘরে অখিলের প্রবেশ
[তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছিয়া হিমি উঠিয়া দাঁড়াইল]
হিমি। মাসিকে ডেকে দিই।
অখিল। দরকার নেই। তেমন জরুরি কিছু নয়।
হিমি। দাদার ঘরে কি যাবেন।
অখিল। না, এইখান থেকেই খবর নিয়ে যাব। যতীন কেমন আছে।
হিমি। ডাক্তার বলেন, আজ অবস্থা ভালো নয়।
অখিল। কদিন থেকে তোমরা দিনরাত্রিই খাটছ। আমি এলুম তোমাদের একটু জিরোতে দেবার জন্যে। বোধ হয় রোগীর সেবা