প্রতিবেশিনী। যতীন আজ কেমন আছে, হিমি।
হিমি। ভালো না, কায়েতপিসি।
প্রতিবেশিনী। বলি, খিধেটা তো আছে এখনো?
হিমি। না, একচামচ বার্লিও সইছে না।
প্রতিবেশিনী। আমি যা বলি, একবার দেখোই-না, বাছা। আমার ঠাকুরজামাইয়ের ঠিক ঐরকম হয়েছিল। ঠাকুরের কৃপায় খেতে পারত, খিধে ছিল বেশ, তাই রক্ষে। কিন্তু একটু পাশ ফিরতে গেলেই— যতীনেরও তো ঐরকম পাঁজরের ব্যথা—
হিমি। না, ওঁর তো কোনো ব্যথা নেই।
প্রতিবেশিনী। তা নাই রইল। কিন্তু ঠাকুরজামাইও ঠিক এইরকম কত মাস ধরে শয্যাগত ছিল। তাই বলি বাছা, ফরিদপুর থেকে আনিয়ে নে-না সেই কপিলেশ্বর ঠাকুরের— যদি বলিস তো নাহয় আমার ছেলে অতুলকে—
হিমি। তুমি একবার মাসিকে ব’লে দেখো তিনি যদি—
প্রতিবেশিনী। তোর মাসি? সে তো কানেই আনে না। সে কি কিছু মানে। যদি মানত তবে তার এমন দশা হয়?— বলি হিমি, তোদের বউ তো যতীনের ঘরের দিক দিয়েও যায় না।
হিমি। না, না, মাঝে মাঝে তো—
প্রতিবেশিনী। আমার কাছে ঢেকে কী হবে, বাছা। তোমরা যে বড়ো সাধ করে এমন রূপসী মেয়ে ঘরে আনলে— এখন দুঃখের দিনে তোমাদের পরী বউয়ের রূপ নিয়ে কী হবে বলো তো। এর চেয়ে যে কালো কুচ্ছিৎ—
হিমি। অমন করে বোলো না, কায়েতপিসি। আমাদের বউ ছেলেমানুষ—
প্রতিবেশিনী। ওমা, ছেলেমানুষ বলিস কাকে। বয়েস ভাঁড়িয়ে বিয়ে দিয়েছিল বলেই কি আমাদের চোখ নেই। অমন ছেলে যতীন, তার কপালে এমন— ঐ যে আসছে মণি—
এসো বাছা, এসো। ছাতে ছিলে বুঝি?
মণি। হাঁ।
প্রতিবেশিনী। শীলেদের বাড়ির বর বেরিয়েছে, তাই বুঝি দেখতে গিয়েছিলে? আহা, ছেলেমানুষ দিনরাত রুগীর ঘরে কি—
মণি। আমার টবের গাছে জল দিতে গিয়েছিলুম।
প্রতিবেশিনী। ভালো কথা মনে করিয়ে দিলে। তোমার গোলাপের কলম আমাকে গোটাদুয়েক দিতে হবে। অতুলের ভারি গাছের শখ, ঠিক তোমার মতো।