রসিক। ভাই শৈল।
শৈলবালা। কী রসিকদাদা।
রসিক। একি আমার কাজ। মহাদেবের তপোভঙ্গের জন্যে স্বয়ং কন্দর্পদেব ছিলেন, আর আমি বৃদ্ধ —
শৈলবালা। তুমি তো বৃদ্ধ, তেমনি যুবক দুটিও তো যুগল মহাদেব নন।
রসিক। তা নন, সে আমি বেশ ঠাওর করেই দেখেছি। সেইজন্যেই তো নির্ভয়ে এসেছিলুম। কিন্তু, তাদের সঙ্গে রাস্তার মধ্যে হিমে দাঁড়িয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত রসালাপ করবার মতো উত্তাপ আমার শরীরে তো নেই।
শৈলবালা। তাঁদের সংসর্গে উত্তাপ সঞ্চয় করে নেবে।
রসিক। সজীব গাছ যে সূর্যের তাপে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে মরা কাঠ তাতেই ফেটে যায়, যৌবনের উত্তাপ বুড়ো মানুষের পক্ষে ঠিক উপযোগী বোধ হয় না।
শৈলবালা। কই, তোমাকে দেখে ফেটে যাবে বলে তো বোধ হচ্ছে না।
রসিক। হৃদয়টা দেখলে বুঝতে পারতিস ভাই।
শৈলবালা। কী বল রসিকদা। তোমারই তো এখন সব চেয়ে নিরাপদ বয়েস। যৌবনের দাহে তোমার কী করবে।
রসিক। শুষ্কেন্ধনে বহ্নিরুপৈতি বৃদ্ধিম্। যৌবনের দাহ বৃদ্ধকে পেলেই হুহুঃশব্দে জ্বলে ওঠে — সেইজন্যেই তো ‘বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা' বিপত্তির কারণ। কী আর বলব ভাই।
নীরবালার প্রবেশ
রসিক। আগচ্ছ বরদে দেবি। কিন্তু, বর তুমি আমাকে দেবে কি না জানি নে, আমি তোমাকে একটি বর দেবার জন্যে প্রাণপাত করে মরছি। শিব তো কিছুই করছেন না, তবু তোমাদের পুজো পাচ্ছেন ; আর এই - যে বুড়ো খেটে মরছে, এ কি কিছুই পাবে না।
নীরবালা। শিব পান ফুল, তুমি পাবে তার ফল — তোমাকেই বরমাল্য দেব রসিকদাদা।
রসিক। মাটির দেবতাকে নৈবেদ্য দেবার সুবিধা এই যে, সেটি সম্পূর্ণ ফিরে পাওয়া যায় — আমাকেও নির্ভয়ে বরমাল্য দিতে পারিস, যখনই দরকার হবে তখনই ফিরে পাবি। তার চেয়ে ভাই, আমাকে একটা গলাবন্ধ বুনে দিস, বরমাল্যের চেয়ে সেটা বুড়ো মানুষের কাজে লাগবে।
নীরবালা। তা দেব — একজোড়া পশমের জুতো বুনে রেখেছি সেও শ্রীচরণেষু হবে।
রসিক। আহা, কৃতজ্ঞতা একেই বলে। কিন্তু নীরু, আমার পক্ষে গলাবন্ধই যথেষ্ট — আপাদমস্তক নাই হল, সেজন্যে উপযুক্ত লোক পাওয়া যাবে, জুতোটা তাঁরই জন্যে রেখে দে।
নীরবালা। আচ্ছা, তোমার বক্তৃতাও তুমি রেখে দাও।