মণি। তা দেব।
প্রতিবেশিনী। আর, শোনো বাছা— তোমার গ্রামোফোন তো আজকাল আর ছোঁও না— যদি বল তো ওটা না-হয় নিজের খরচায় মেরামত করিয়ে—
মণি। তা নিয়ে যাও-না।
প্রতিবেশিনী। তোমাদের বউয়ের হাত খুব দরাজ। হবে না কেন। কত বড়ো ঘরের মেয়ে। বড়ো লক্ষ্মী। ঐ আসছেন তোমাদের মাসি— আমি যাই। যতীনের দরজা আগলে বসেই আছেন। ব্যামোকে তো ঠেকাতে পারেন না, আমাদেরই ঠেকিয়ে রাখেন।
হিমি। কী খুঁজছ, বউদিদি।
মণি। আমার কুকুরছানাকে দুধ খাওয়াবার সেই পিরিচটা।
মাসি। বউমা, তোমার পায়ের শব্দের জন্যে যতীন কান পেতে আছে তা জানো। এই সন্ধের মুখে রুগীর ঘরে ঢুকে নিজের হাতে আলোটি জ্বেলে দাও, তার মন খুশি হোক। কী হল। বলি, কথার একটা জবাব দাও।
মণি। এখনি আমাদের—
মাসি। যেই আসুক-না কেন, তোমাকে তো বেশিক্ষণ থাকতে বলছি নে। এই তার মকরধ্বজ খাবার সময় হল। তোমার জন্যেই রেখে দিয়েছি। তুমি খলটা নিয়ে ওর পাশতলায় দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে মধু দিয়ে মেড়ে দাও। তার পরে ওষুধটা খাওয়া হলেই চলে এসো।
মণি। আমি তো দুপুরবেলায় ওঁর ঘরে গিয়েছিলুম।
মাসি। তখন তো ও ঘুমিয়ে পড়েছিল।
মণি। সন্ধের সময় ঐ ঘরে ঢুকলে কেমন আমার ভয় করতে থাকে।
মাসি। কেন, তোর ভয় কিসের।
মণি। ঐ ঘরেই আমার শ্বশুরের মৃত্যু হয়েছিল— সে আমার খুব মনে পড়ে।
মাসি। কেউ মরে নি, সমস্ত পৃথিবীতে কোথাও এমন একটু জায়গা আছে?
মণি। বোলো না, মাসি, বোলো না, সত্যি বলছি, মরাকে আমি ভারি ভয় করি।
মাসি। আচ্ছা বাপু, দিনের বেলাতেই নাহয় তুই আরেকটু ঘন ঘন—
মণি। আমি চেষ্টা করেছি যেতে। কিন্তু আমার কেমন গা ছম্ ছম্ করে। উনি আমার মুখের দিকে এমন একরকম করে চান— চোখদুটো জ্বলজ্বল করতে থাকে।
মাসি। তাতে ভয়ের কথাটা কী।
মণি। মনে হয় যেন উনি অনেক দূর থেকে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। যেন এ পৃথিবীতে না।
মাসি। আচ্ছা বাপু, বাইরে থেকেই নাহয় এই পথ্যিটথ্যিগুলো তৈরি করে দে। তুই মনে করে নিজের হাতে কিছু করেছিস শুনলে, সেও তবু কতকটা—
মণি। মাসি, আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও। আমি দিনরাত এই-সব রোগের কাজ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারব না।