রসিক। দেখেছিস ভাই শৈল, আজকাল নীরুরও লজ্জা দেখা দিয়েছে — লক্ষণ খারাপ।
শৈলবালা। নীরু, তুই করছিস কী। আবার এ ঘরে এসেছিস? আজ যে এখানে আমাদের সভা বসবে — এখনই কে এসে পড়বে, বিপদে পড়বি।
রসিক। সেই বিপদের স্বাদ ও একবার পেয়েছে, এখন বারবার বিপদে পড়বার জন্যে ছট্ফট্ করে বেড়াচ্ছে।
নীরবালা। দেখো রসিকদাদা, তুমি যদি আমাকে বিরক্ত কর তা হলে গলাবন্ধ পাবে না বলছি। দেখো দেখি দিদি, তুমিও যদি রসিকদার কথায় ঐরকম করে হাস, তা হলে ওঁর আস্পর্ধা আরো বেড়ে যাবে।
রসিক। দেখেছিস ভাই শৈল, নীরু আজকাল ঠাট্টাও সইতে পারছে না, মন এত দুর্বল হয়ে পড়েছে। — নীরুদিদি, কোনো কোনো সময় কোকিলের ডাক শ্রুতিকটু বলে ঠেকে এইরকম শাস্ত্রে আছে। তোর রসিকদাদার ঠাট্টাকেও কি তোর আজকাল কুহুতান বলে ভ্রম হতে লাগল।
নীরবালা। সেইজন্যেই তো তোমার গলায় গলাবন্ধ জড়িয়ে দিতে চাচ্ছি — তানটা যদি একটু কমে।
শৈলবালা। নীরু, আর ঝগড়া করিস নে — আয়, এখনই সবাই এসে পড়বে।
[ নীর ও শৈলের প্রস্থান
পূর্ণর প্রবেশ
রসিক। আসুন পূর্ণবাবু।
পূর্ণ। এখনো আর কেউ আসেন নি?
রসিক। আপনি বুঝি কেবল এই বৃদ্ধটিকে দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন? আরো সকলে আসবেন পূর্ণবাবু।
পূর্ণ। হতাশ কেন হবে রসিকবাবু।
রসিক। তা কেমন করে বলব বলুন। কিন্তু ঘরে যেই ঢুকলেন আপনার দুটি চক্ষু দেখে বোধ হল তারা যাকে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছে সে ব্যক্তি আমি নই।
পূর্ণ। চক্ষুতত্ত্বে আপনার এত দূর অধিকার হল কী করে।
রসিক। আমার পানে কেউ কোনোদিন তাকায় নি পূর্ণবাবু, তাই এই প্রাচীন বয়স পর্যন্ত পরের চক্ষু পর্যবেক্ষণের যথেষ্ট অবসর পেয়েছি। আপনাদের মতো শুভাদৃষ্ট হলে দৃষ্টিতত্ত্ব লাভ না করে অনেক দৃষ্টিলাভ করতে পারতুম। কিন্তু, যাই বলুন পূর্ণবাবু, চোখ দুটির মতো এমন আশ্চর্য সৃষ্টি আর - কিছু হয় নি — শরীরের মধ্যে মন যদি কোথাও প্রত্যক্ষ বাস করে সে ঐ চোখের উপরে।
পূর্ণ। ( সোৎ সাহে ) ঠিক বলেছেন রসিকবাবু। ক্ষুদ্র শরীরের মধ্যে যদি কোথাও অনন্ত আকাশ কিংবা অনন্ত সমুদ্রের তুলনা থাকে সে ঐ দুটি চোখে।
রসিক। —
নিঃসীমশোভাসৌভাগ্যং নতাঙ্গ্যা নয়নদ্বয়ং
অন্যোহন্যালোকনানন্দবিরহাদিব চঞ্চলং। — বুঝেছেন পূর্ণবাবু?
পূর্ণ। না, কিন্তু বোঝবার ইচ্ছা আছে।
রসিক। —