যতীন। তারা বাইরে থেকে দেখছে, আমি ভিতরে থেকে যা দেখতে পাচ্ছি তা এখনো শেষ হয় নি। কোনোকোলে শেষ হবে না। কল্পলোকের শেষ পাথরটি বসিয়ে আজ পর্যন্ত কোন্ শিল্পী বলেছে, এইবার আমার সাঙ্গ হল? বিশ্বের সৃষ্টিকর্তাও বলতে পারেন নি, তাঁরও কাজ চলছে।
মাসি। যতীন, কিন্তু আর না বাবা, এইবার তুই একটু ঘুমো।
যতীন। না মাসি, আজ তুমি আমাকে সকাল সকাল ঘুমোতে বোলো না—
মাসি। কিন্তু ডাক্তার—
যতীন। থাক্ ডাক্তার। আজ আমার জগৎ তৈরি হয়ে গেল। আজ আমি ঘুমোব না— আজ বাড়ির সব আলোগুলো জ্বেলে দাও, মাসি। মণি কোথায়। তাকে একবার—
মাসি। তাকে সেই তেতালার নতুন ঘরটায় ফুল দিয়ে সাজিয়ে বসিয়ে দিয়েছি।
যতীন। এ তোমার মাথায় কী করে এল। ভারি চমৎকার। দরজার দুধারে মঙ্গলঘট দিয়েছ?
মাসি। হাঁ, দিয়েছি বৈকি।
যতীন। আর, মেঝেতে পদ্মফুলের আলপনা?
মাসি। সে আর বলতে?
যতীন। একবার কোনোরকম করে ধরাধরি করে আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে পার না? একবার কেবল দেখে আসি, আমার মণি আপন-তৈরি ঘরের মাঝখানটিতে বসে।
মাসি। না যতীন, সে কিছুতেই হতে পারে না, ডাক্তার ভারি রাগ করবে।
যতীন। আমি মনে মনে ছবিটা দেখতে পাচ্ছি। কোন্ শাড়িটা পরেছে।
মাসি। সেই বিয়ের লাল শাড়িটা।
যতীন। আমার এই বাড়ির নাম কী হবে জান, মাসি?
মাসি। কী বল্ তো।
যতীন। মণিসৌধ।
মাসি। বেশ নামটি।
যতীন। তুমি এর সবটার মানে বুঝতে পারছ না, মাসি।
মাসি। না, সবটা হয়তো পারছিনে।
যতীন। সৌধ বলতে কেবল বাড়ি বুঝলে চলবে না। ওর মধ্যে সুধা আছে—
মাসি। তা আছে, যতীন— এ তো কেবল টাকা দিয়ে তৈরি হয় নি— তোর মনের সুধা এতে ঢেলেছিস।
যতীন। তোমরা হয়তো শুনলে হাসবে—
মাসি। না, হাসব কেন, যতীন।— বল্, কী বলছিলি।
যতীন। আমি আজ বুঝতে পারছি, তাজমহল তৈরি করে শাজাহান কী সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। সে সান্ত্বনা তাঁর মৃত্যুকেও অতিক্রম ক’রে আজ পর্যন্ত—
মাসি। আর কথা কোস্ নে, যতীন— ঘুমোতে না চাস ঘুমোস নে, চুপ করে একটু ভাব নাহয়।
যতীন। মণি তার বিয়ের সেই লাল বেনারসি পরেছে! আজ তাকে একবার—