মাসি। ডাক্তার যে বারণ করে, যতীন—
যতীন। ডাক্তার ভাবে, পাছে আমার—
মাসি। তোমার জন্যে নয়, মণির জন্যেই— ওকে বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু ওর ভিতরটাতে—
যতীন। দুর্বলতা আছে, ডাক্তার বললে বুঝি—
মাসি। সে আমরা সকলেই লক্ষ্য করেছি—
যতীন। আহা, বেচারা, তা হলে সাবধান হোয়ো— কাজ নেই, রুগীর ঘর থেকে দূরে দূরে থাকাই ভালো।
মাসি। ও তো আসতে পেলে বাঁচে, কিন্তু আমরা—
যতীন। না, না, কাজ নেই, কাজ নেই। মাসি, ঐ শেলফের উপর আল্বামটা আছে, দিতে পার?—
তোমাকে তাজমহলের কথা বলছিলুম। এখন মনে হচ্ছে, আমার যেন সেই শাজাহানের মতোই হল— আমি ক্ষীণ জীবনের এপার,— সে পূর্ণ জীবনের ওপারে— অনেক দূরে, আর তার নাগাল পাওয়া যায় না। যেমন সেই সম্রাটের মম্তাজ! তাকেই নিবেদন করে দিলুম আমার এই বাড়িটি— আমার এই তাজমহল। এরই মধ্যে সে আছে, চিরকাল থাকবে, অথচ আমার চোখের কাছে সে নেই।
মাসি। ও যতীন, আর কেন কথা বলছিস। একবার একটু থাম্— ঘুমের ওষুধটা এনে দিই।
যতীন। না মাসি, না। আজ ঘুম নয়। আমি জেগে থেকে কিছু কিছু পাই, ঘুমের মধ্যে আরো সব হারিয়ে যায়।— মাসি, তোমার কাছে কেবলই আমি মণির কথা বলি, কিছু মনে কর না তো?
মাসি। কিছু না, যতীন। কত ভালো লাগে বলতে পারি নে। জানিস, কার কথা মনে পড়ে?
যতীন। কার কথা।
মাসি। তোর মায়ের। এমনি ক’রে যে একদিন তারও মনের কথা আমাকে শুনতে হত। তোর বাবা তখন আমাদের বাড়িতে থেকে মেডিক্যাল কলেজে পড়তেন। তোর মায়ের সেদিনকার মনের কথা আমি ছাড়া বাড়িতে কেউ জানত না। বাবা যখন বিয়ের জন্যে অন্য পাত্র জুটিয়ে আনলেন, তখন আমিই তো তাঁকে—
যতীন। সে তোমারই কাছে শুনেছি। মাকে বুঝি দাদামশাই কিছুতেই পারলেন না, শেষকালে বাবার সঙ্গেই বিয়ে দিতে হল। সেদিনের কথা কল্পনা করতে এত আনন্দ হয়।
মাসি। তোর মায়ের ভালোবাসা, সে যে তপস্যা ছিল। পাঁচ বৎসর ধরে তার হোমের আগুন জ্বলল, তার পরে সে বর পেলে। যতীন, তোর মধ্যে সেই আগুনই আমি দেখি, আর অবাক হয়ে ভাবি।
যতীন। মা তাঁর হোমের আগুন আমার রক্তের মধ্যে ঢেলে দিয়ে গেছেন— আমার তপস্যাতেও বর পাব। কী জানি মনে হচ্ছে মাসি, সেই বর পাবার সময় আমার খুব কাছে এসেছে।— কোথায় ঐ বাঁশি বাজছে?
মাসি। বিয়ের সানাই। আজ যে বিয়ের লগ্ন।
যতীন। কী আশ্চর্য। আজই তো মণি লাল বেনারসি পরেছে। জীবনে বিয়ের লগ্ন বারে বারে আসে। আজ আলোগুলো সব জ্বালাতে বলে দাও-না, মাসি। দেউড়ি থেকে আরম্ভ করে—
মাসি। চোখে বেশি আলো লাগলে ঘুমোতে পারবি নে যে, যতীন—