বিধুমুখী। সে আবার কী।
সতীশ। একগাছা দড়ি।
বিধুমুখী। দেখ্, আমাকে আর রোজ রোজ কাঁদাস্ নে। আমার রক্ত শুকিয়ে গেল, চোখের জলও বাকি নেই। এক দিকে তোর বাবা, আর-এক দিকে তুই — উপরে সরার চাপ আর নীচে আগুন, আমি যে গুমে গুমে—
এসো দিদি, বোসো। আজ কোন্ পুণ্যে রায়মশায়ের দেখা পাওয়া গেল। দিদি না আসলে তোমার আর দেখা পাবার জো নেই।
শশধর। এতেই বুঝবে তোমার দিদির শাসন কী কড়া। দিনরাত্রি চোখে চোখে রাখেন।
সুকুমারী। তাই বটে, এমন রত্ন ঘরে রেখেও নিশ্চিন্ত মনে ঘুমনো যায় না।
বিধুমুখী। নাক ডাকার শব্দে!
সুকুমারী। সতীশ, ছি ছি, তুই এ কী কাপড় পরেছিস। তুই কি এইরকম ধুতি পরে কলেজে যাস নাকি। বিধু, ওকে যে লাউঞ্জ সুটটা কিনে দিয়েছিলেম, সে কী হল।
বিধুমুখী। সে ও কোন্কালে ছিঁড়ে ফেলেছে।
সুকুমারী। তা তো ছিঁড়বেই। ছেলেমানুষের গায়ে এক কাপড় কতদিন টেকে। তা, তাই বলে কি আর নূতন সুট তৈরি করাতে নেই। তোদের ঘরে সকলই অনাসৃষ্টি।
বিধুমুখী। জানই তো দিদি, তিনি ছেলের গায়ে সভ্য কাপড় দেখলেই আগুন হয়ে ওঠেন। আমি যদি না থাকতেম তো তিনি বোধ হয় ছেলেকে দোলাই গায়ে দিয়ে কোমরে ঘুনসি পরিয়ে ইস্কুলে পাঠাতেন — মা গো, এমন সৃষ্টিছাড়া পছন্দও কারো দেখি নি।
সুকুমারী। মিছে না। এক বৈ ছেলে নয়, একটু সাজাতে-গোজাতেও ইচ্ছা করে না? এমন বাপও তো দেখি নি। সতীশ, আমি তোর জন্য একসুট কাপড় র্যাম্জের ওখানে অর্ডার দিয়ে রেখেছি। আহা, ছেলেমানুষের কি শখ হয় না।
সতীশ। এক সুটে আমার কি হবে, মাসিমা। লাহিড়ি সাহেবের ছেলে আমার সঙ্গে একসঙ্গে পড়ে — সে আমাকে তাদের বাড়িতে টেনিস খেলায় নিমন্ত্রণ করেছে, আমি নানা ছুতো করে কাটিয়ে দিই। আমার তো কাপড় নেই।
শশধর। তেমন জায়গায় নিমন্ত্রণে না যাওয়াই ভালো, সতীশ।
সুকুমারী। আচ্ছা আচ্ছা, তোমার আর বক্তৃতা দিতে হবে না। ওর যখন তোমার মতন বয়স হবে, তখন —
শশধর। তখন ওকে বক্তৃতা দেবার অন্য লোক হবে, বৃদ্ধ মেসোর পরামর্শ শোনবার অবসর হবে না।
সুকুমারী। আচ্ছা মশায়, বক্তৃতা করবার অন্য লোক যদি তোমাদের ভাগ্যে না জুটত, তবে তোমাদের কী দশা হত বলো দেখি।
শশধর। সে কথা বলে লাভ কী। সে অবস্থা চোখ বুজে কল্পনা করাই ভালো।
ভৃত্য। কর্তাবাবু লোহার সিন্দুকের চাবি চেয়েছেন।
সতীশ। (কানে কানে) সর্বনাশ মা, সর্বনাশ। নিশ্চয় গুড়গুড়ির খোঁজ পড়েছে।
বিধুমুখী। একটু চুপ কর্ তুই। কেন রে, চাবি কেন।
ভৃত্য। কাল কোথায় যাবেন, চেক-বইটা চান।