বিধুমুখী। আচ্ছা, একটু সবুর করতে বল্, চাবি নিয়ে এখনই যাচ্ছি।
সতীশ। মা, লোহার সিন্দুক খুললেই তো —
বিধুমুখী। একটু থাম্। আমাকে একটু ভাবতে দে।
সতীশ। (নেপথ্যের দিকে চাহিয়া) না, না, এখানে আনতে হবে না, আমি যাচ্ছি।
সুকুমারী। সতীশ ব্যস্ত হয়ে পালালো কেন, বিধু।
বিধুমুখী। থালায় করে তার জলখাবার আনছিল কিনা, ছেলের তাই তোমাদের সামনে লজ্জা।
সুকুমারী। আহা, বেচারার লজ্জা হতে পারে। ও সতীশ, শোন্ শোন্।
— তোর মেসোমশায় তোকে পেলেটির বাড়ি থেকে আইস্ক্রিম খাইয়ে আনবেন, তুই ওঁর সঙ্গে যা। ওগো যাও-না — ছেলেমানুষকে একটু —
সতীশ। মাসিমা, সেখানে কী কাপড় পরে যাব।
বিধুমুখী। কেন,তোর তো চাপকান আছে।
সতীশ। চাপকান তো পেলেটির খানসামাদেরও আছে। বেমালুম দলে মিশে যাব।
সুকুমারী। আর যাই হোক বিধু, তোর ছেলে ভাগ্যে পৈতৃক পছন্দটা পায় নি, তাই রক্ষা। বাস্তবিক, চাপকান দেখলেই খানসামা কিম্বা যাত্রার দলের ছেলে মনে পড়ে। এমন অসভ্য কাপড় আর নেই।
শশধর। এ কথাগুলো —
সুকুমারী। চুপি চুপি বলতে হবে? কেন, ভয় করতে হবে কাকে। মন্মথ নিজের পছন্দমতো ছেলেকে সাজ করাবেন আর আমরা কথা কইতেও পাব না?
শশধর। সর্বনাশ! কথা বন্ধ করতে আমি বলি নে। কিন্তু সতীশের সামনে এ-সমস্ত আলোচনা —
সুকুমারী। আচ্ছা আচ্ছা, বেশ। তুমি ওকে পেলেটির ওখানে নিয়ে যাও।
সতীশ। (জনান্তিকে) মা, লোহার সিন্দুকের চাবি বাবাকে কিছুতেই দিয়ো না — বরঞ্চ আমার সেই ঘড়ির কথাটা তুলে ওঁর সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে ভুলিয়ে রেখো।
সুকুমারী। এই-যে মন্মথ আসছেন। এখনই সতীশকে নিয়ে বকাবকি করে অস্থির করে তুলবেন। আয় সতীশ, তুই আমার সঙ্গে আয় — আমরা পালাই।
বিধুমুখী। সতীশ ঘড়ি ঘড়ি করে কদিন আমাকে অস্থির করে তুলেছিল। দিদি তাকে একটা রুপোর ঘড়ি দিয়েছেন। আগে থাকতে বলে রাখলেম, তুমি আবার শুনলে রাগ করবে।
মন্মথ। আগে থাকতে বলে রাখলেও রাগ করব। — শোনো, লোহার সিন্দুকের চাবিটা —