মাসি। না না, তার দরকার নেই— সে আমি তাকে—
ডাক্তার। দেখুন, আমাদের ব্যবসায়ে মানুষের চরিত্র অনেকটা বুঝে নেবার অনেক সুবিধা আছে। এটা জেনেছি যে, বউয়ের উপরে শাশুড়ির যে-একটা স্বাভাবিক রীষ থাকে, ঘোর বিপদের দিনেও সে যেন মরতে চায় না। বউ ছেলের সেবা করে তার মন পাবে, এ আর কিছুতেই—
মাসি। কথাটা মিথ্যে নয়, তা রীষ থাকতেও পারে। মনের মধ্যে কত পাপ লুকিয়ে থাকে, অন্তর্যামী ছাড়া আর কে জানে।
ডাক্তার। শুধু বোনপো কেন। বউয়ের প্রতিও তো একটা কর্তব্য আছে। নিজের মন দিয়েই ভেবে দেখুন-না, তার মনটা কী রকম হচ্ছে। বেচারা নিশ্চয়ই ঘরে আসবার জন্যে ছটফট করে সারা হল।
মাসি। বিবেচনাশক্তি কম, অতটা ভেবে দেখি নি তো।
ডাক্তার। দেখুন, আমি ঠোঁটকাটা মানুষ, উচিত কথা বলতে আমার মুখে বাধে না। কিছু মনে করবেন না।
মাসি। মনে করব কেন, ডাক্তার। অন্যায় কোথাও থাকে যদি, নিন্দে না হলে তার শোধন হবে কী করে। তা তোমার কথা মনে রইল, কোনো ত্রুটি হবে না—
হিমি, কী করছিস।
হিমি। দাদার জন্যে দুধ গরম করছি।
মাসি। আচ্ছা, দুধ আমি গরম করব। তুই যা, যতীনকে একটু গান শোনাগে যা। তোর গান শুনতে শুনতে ওর চোখে তবু একটু ঘুম আসে।
প্রতিবেশিনী। দিদি, যতীন কেমন আছে আজ।
মাসি। ভালো নেই, সুরো।
প্রতিবেশিনী। আমার কথা শোনো, দিদি। একবার আমাদের জগু ডাক্তারকে দেখাও দেখি। আমার নাতনি নাক ফুলে ব্যথা হয়ে যায় আর-কি। শেষকালে জগু ডাক্তার এসে তার ডান নাকের ভিতর থেকে এতবড়ো একটা কাঁচের পুঁতি বের করে দিলে। ওর ভারি হাতযশ। আমার ছেলে তার ঠিকানা জানে।
মাসি। আচ্ছা, বোলো ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিতে।
প্রতিবেশিনী। সেদিন তোমাদের বউকে আলিপুরে জু-তে দেখলুম যে।
মাসি। ও জন্তু-জানোয়ার ভারি ভালোবাসে, প্রায় সেখানে যায়।
প্রতিবেশিনী। জন্তু ভালোবাসে ব’লে কি স্বামীকে ভালোবাসতে নেই।
মাসি। কে বললে, ভালোবাসে না! ছেলেমানুষ, দিনরাত রুগীর কাছে থাকলে বাঁচবে কেন। আমরাই তো ওকে জোর ক’রে—
প্রতিবেশিনী। তা যাই বল, পাড়াসুদ্ধ মেয়েরা সবাই কিন্তু ওর কথা—
মাসি। পাড়ার মেয়েরা তো ওকে বিয়ে করে নি, সুরো। আমার যতীন ওকে বোঝে, সে তো কোনোদিন—