মন্মথ। ঐ কাপড়গুলোতেই আছে চাবি-চুরির ব্যাকটিরিয়া — টাকা-চুরির বীজ — এই আমি তোমাকে বলে গেলুম।
শশধর। বউ, ছি ছি, এমন করে কাঁদতে নেই। ওঠো ওঠো।
বিধুমুখী। রায়মশায়, আমার বেঁচে সুখ নেই।
শশধর। কিছুই বুঝতে পারছি নে। মন্মথ কাকে সন্দেহ করছে? সতীশকে নাকি?
বিধুমুখী। নিজের ছেলেকে যদি সন্দেহ না করবে, তবে বাপ কিসের। যদি মা হত, ছেলেকে গর্ভে ধারণ করত, তা হলে বুঝত ছেলে বলতে কী বুঝায়। গেছে তো গেছে, নাহয় সোনার গুড়গুড়িটাই গেছে আমার সতীশ কি ওঁর সোনার গুড়গুড়ির চেয়ে কম দামের।
শশধর। সোনার গুড়গুড়ির কথা কী বলছ। সিন্দুক থেকে কী গেছে, দেখেছ নাকি।
বিধুমুখী। হাঁ, তা — না দেখি নি। আমি বলছি ওঁর সিন্দুকে সেই গুড়গুড়ি ছাড়া আর তো দামি জিনিস নেই — তা সেটা যদি চুরি হয়েই থাকে, তাই বলেই কি ছেলেকে সন্দেহ।
শশধর। তোমার সন্দেহটা কাকে, বউ।
বিধুমুখী। কেন। ওঁর তো সেই বড়ো ভালোবাসার উড়ে বেয়ারা আছে —বনমালী। তার হাতেই তো ওঁর সব। সে হল ভারি সাধু, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির। একটু ইশারাতেও বলো দেখি পুলিস দিয়ে তার বাক্স তল্লাস করতে, হাঁ-হাঁ করে মারতে আসবেন — সে তো ওঁর ছেলে নয়, ওঁর বেয়ারা, তাই তার ’পরে এত ভালোবাসা।
শশধর। কিছু মনে কোরো না বউ, আমি যাচ্ছি, ওকে বুঝিয়ে বলছি।
সতীশ। মা, ভয়ানক বিপদ।
বিধুমুখী। আবার কী হল। বুকের ধড়্ধড়ানি এক মুহূর্ত থামতে দিল না।
সতীশ। সেই যে মতি পাল, যার কাছে টাকা ধার নিয়েছিলুম, সে বাবার কাছে চিঠি দিয়ে লোক পাঠিয়েছে দেখলুম—এতক্ষণে বোধ হয় —
বিধুমুখী। সর্বনাশ! যা, তুই রায়মশায়কে শিগগির আমার কাছে পাঠিয়ে দে, এখনো তিনি যান নি।
মন্মথ। এই দেখো চিঠি। পড়ে দেখো।
বিধুমুখী। না, আমি পড়তে চাই নে।
মন্মথ। পড়তেই হবে।
বিধুমুখী। (চিঠি পড়িয়া) তা কী হয়েছে।
মন্মথ। বেশি কিছু না, চুরি হয়েছে, আমার গুড়গুড়ি চুরি।
বিধুমুখী। নিজের ছেলে নিয়েছে, তাকে বল চুরি? বলতে তোমার জিব টাক্রায় আটকে গেল না?