তোমা লাগি পিতৃদেব!
বিনায়ক রাও। কোথা যাবি অমা?
ধিক্ অশ্রুজল। ওরে দুর্ভাগিনী নারী,
যে বৃক্ষে বাঁধিলি নীড় ধর্ম না বিচারি
সে তো বজ্রাহত, দগ্ধ, যাবি কার কাছে
ইহকাল-পরকাল-হারা?
অমাবাই। পুত্র আছে —
বিনায়ক রাও। থাক্ পুত্র। ফিরে আর চাস নে পশ্চাতে
পাতকের ভগ্নশেষ-পানে। আজ রাতে
শোণিততর্পণে তোর প্রায়শ্চিত্ত শেষ —
যবনের গৃহে তোর নাহিকো প্রবেশ
আর কভু। বল্ তবে কোথা যাবি আজ?
অমাবাই। হে নির্দয়, আছে মৃত্যু, আছে যমরাজ,
পিতা হতে স্নেহময়, মুক্ত দ্বারে যাঁর
আশ্রয় মাগিয়া কেহ ফিরে নাই আর।
বিনায়ক রাও। মৃত্যু? বৎসে! হা দুর্বৃত্তে! পরম পাবক
নির্মল উদার মৃত্যু — সকল পাতক
করে গ্রাস — সিন্ধু যথা সকল নদীর
সব পঙ্করাশি। সেই মৃত্যু সুগভীর
তোর মুক্তি গতি। কিন্তু মৃত্যু আজ না সে,
নহে হেথা। চল্ তবে দূর তীর্থবাসে
সলজ্জস্বজন আর সক্রোধসমাজ
পরিহরি, বিসর্জি কলঙ্ক ভয় লাজ
জন্মভূমি-ধুলিতলে। সেথা গঙ্গাতীরে
নবীন নির্মল বায়ু, — স্বচ্ছ পুণ্যনীরে
তিন সন্ধ্যা স্নান করি, নির্জন কুটিরে
শিব শিব শিব নাম জপি শান্ত মনে,
সুদূর মন্দির হতে সায়াহ্নপবনে
শুনিয়া আরতিধ্বনি, — একদিন কবে
আয়ুঃশেষে মৃত্যু তোরে লইবে নীরবে —
পতিত কুসুমে লয়ে পঙ্ক ধুয়ে তার
গঙ্গা যথা দেয় তার পূজা-উপহার