নন্দী। অযোগ্যতা হচ্ছে শূন্যপেয়ালা, কৃপা দিয়ে ভরা সহজ।
চারু। শুধু কেবল কৃপা! ছিঃ! শ্রদ্ধা কি তার চেয়েও বড়ো নয়। চলুন খেলতে। কিন্তু আপনি তো জানেন, আমি ভারি বিশ্রী খেলি।
নন্দী। খেলায় আপনি হারতে পারেন, কিন্তু বিশ্রী খেলতে কিছুতেই পারেন না।
চারু। থ্যাঙ্ক্স্।
নলিনী। কী সতীশ, এখনো যে তোমার মনের খেদ মিটল না। টেনিস্কোর্তার শোকে তোমার হৃদয়টা যে বিদীর্ণ হয়ে গেল। হায় হায়, কোর্তাহারা অভাগা হৃদয়ের সান্ত্বনা জগতে কোথায় আছে— দরজির বাড়ি ছাড়া!
সতীশ। আমার হৃদয়টার ঠিকানা যদি জানতে, তা হলে খুব বেশি দূর তাকে খুঁজে বেড়াতে হত না।
নলিনী। (করতালি দিয়া) ব্রাভো! মিস্টার নন্দীর দৃষ্টান্তে মিষ্ট কথার আমদানি শুরু হয়েছে। উন্নতি হবে ভরসা হচ্ছে। এসো একটু কেক খেয়ে যাবে; মিষ্ট কথার পুরস্কার মিষ্টান্ন।
সতীশ। না, আজ আর খাব না, আমার শরীরটা —
নলিনী। সতীশ, আমার কথা শোনো — টেনিস্কোর্তার খেদে শরীর নষ্ট কোরো না। কোর্তা জিনিসটা জগতের মধ্যে সেরা জিনিস, কিন্তু এই তুচ্ছ শরীরটা না হলে সেটা ঝুলিয়ে বেড়াবার সুবিধা হয় না।
সতীশ। নেলি, আজ তোমাকে একটা খুব বিশেষ কথা বলতে এসেছি —
নলিনী। না না, বিশেষ কথার চেয়ে সাধারণ কথা আমি ভালোবাসি।
সতীশ। যেমন করে হোক বলতেই হবে, নইলে বাঁচব না, তার পরে যদি বিদায় করে দাও তবে মাথা হেঁট করে জন্মের মতোই—
নলিনী। সর্বনাশ! সহজে বলবার কথা পৃথিবীতে এত আছে যে, চমক-লাগানো কথা না বললেও সময় কেটে যায়। আমারও বলবার কথা একটা আছে, তার পরে যদি সময় থাকে তুমি বোলো।
সতীশ। আচ্ছা, তাই আগে বলে নাও, কিন্তু আমার কথা শুনতেই হবে।
নলিনী। বলবার জন্যেই তোমাকে ডেকেছি, বলে নিই; রাগ কোরো না।
সতীশ। তুমি ডেকেছ বলে রাগ করব, আমি এত বড়ো স্যাভেজ?
নলিনী। সকল সময়েই নন্দীসাহেবের চেলাগিরি কোরো না। বলো দেখি, আমার জন্মদিনে তুমি আমাকে অমন দামি জিনিস কেন দিলে। সেই তোমার নেক্লেস?
সতীশ। নেক্লেস? সেটা কি তবে —
নলিনী। ভুল বুঝো না — জিনিসটা খুব ভালো। কিন্তু তুমি যে ঐটে কেনবার জন্যে—
সতীশ। নেলি, চুপ চুপ, তোমার মুখে আমি সে-কথা শুনতে পারব না। কে তোমাকে কী বলেছে, সব মিথ্যে কথা, মিথ্যে কথা—
নলিনী। হঠাৎ অমন খেপে উঠলে কেন। কী মিথ্যে কথা? নেক্লেসটা তুমিই আমাকে দিয়েছ, সেও কি মিথ্যে কথা।
সতীশ। না, না। হাঁ, তা হতেও পারে, এক রকম করে দেখলে হয়তো—