সতীশ। চাঁদনির কাপড় পরি বলে?
নলিনী। সে একটা কারণ বৈকি।
সতীশ। তুমি আমাকে এমন কথা বললে?
নলিনী। আমি যদি তোমাকে সত্যি কথা বলি, খুশি হোয়ো, অন্যে বললে রাগ করতে পার।
সতীশ। তুমি আমাকে অযোগ্য বলে জান, এতে আমি খুশি হব?
নলিনী। এই টেনিস্কোর্টের অযোগ্যতাকে তুমি অযোগ্যতা বলে লজ্জা পাও? এতেই আমি সব চেয়ে লজ্জা বোধ করি। তুমি তো তুমি, এখানে স্বয়ং বুদ্ধদেব এসে যদি দাঁড়াতেন, আমি দুই হাত জোড় করে পায়ের ধুলো নিয়েই তাঁকে বলতুম, ভগবান, লাহিড়িদের বাড়ির এই টেনিস্কোর্টে আপনাকে মানায় না, মিস্টার নন্দীকে তার চেয়ে বেশি মানায়। শুনে কি তখনই তিনি হার্মানের বাড়ি ছুটতেন টেনিস্সুট অর্ডার দিতে।
সতীশ। বুদ্ধদেবের সঙ্গে —
নলিনী। তোমার তুলনাই হয় না, তা জানি। আমি বলতে চাই, টেনিস্কোর্টের বাইরেও একটা মস্ত জগৎ আছে — সেখানে চাঁদনির কাপড় পরেও মনুষ্যত্ব ঢাকা পড়ে না। এই কাপড় প’রে যদি এখনই ইন্দ্রলোকে যাও তো উর্বশী হয়তো একটা পারিজাতের কুঁড়ি ওর বাট্ন্হোলে পরিয়ে দিতে কুণ্ঠিত হবে না — অবিশ্যি তোমাকে যদি তার পছন্দ হয়।
সতীশ। বাট্ন্হোল তো এই রয়েছে, গোলাপের কুঁড়িও তোমার খোঁপায়—এবারে পছন্দর পরিচয়টা কি ভিক্ষে করে নিতে পারি।
নলিনী। আবার ভুলে যাচ্ছ, এটা স্বর্গ নয়, এটা টেনিস্কোর্ট।
সতীশ। এটা যে স্বর্গ নয়, সেইটে ভুলতে পারি নে বলেই তো—
নলিনী। এইবার তো নন্দীর সুর লাগছে গলায় —
সতীশ। তার একটিমাত্র কারণ — আমি টেনিস্কোর্টেরই যোগ্য হতে চাই। উর্বশীর হাতের পারিজাতের কুঁড়ির ’পরে আমার একটুও লোভ নেই।
নলিনী। বড়ো দুঃসাধ্য তোমার তপস্যা, সতীশ — স্বর্গে তোমার কম্পিটিশন কার্তিককে নিয়ে, চাঁদকে নিয়ে — এখানে আছেন স্বয়ং মিস্টার নন্দী। পেরে উঠবে না, কন্যাকর্তাদের সব দামি দামি অর্কিড ওঁরই বাট্ন্হোলে গিয়ে পৌঁচচ্ছে। ছেড়ে দাও আশা।
সতীশ। অর্কিডের আশা ছেড়েছি, কিন্তু ঐ গোলাপের কুঁড়ি —
নলিনী। ওটা বাবা যখন দোকান থেকে আনিয়ে দিয়েছিলেন, তখন কামনা করেছিলেন, ওর সদগতি হয় যেন —
সতীশ। অর্থাৎ —
নলিনী। ঐ অর্থাতের মধ্যে অনেকখানি অর্থ আছে।
সতীশ। আর আমি যে তোমার স্তব করে মরি, তার মধ্যে যতটা শব্দ আছে ততটা অর্থ নেই?
নলিনী। যদি কিছু থাকে, সে কন্যাকর্তাদের অমরলোকের উপযুক্ত নয়।
সতীশ। অতএব আমাকে সদ্য স্বর্গপ্রাপ্তির চেষ্টা করতে হবে। চললেম তবে সেই তপস্যায়।
নন্দী। হ্যালো সতীশবাবু! ও কী ও! সেই নেক্লেসটা নিয়ে চলেছ যে! সেদিন তো অ্যাল্বম নিয়ে সরে পড়েছিলে, আজ নেক্লেস? Bravo! You know how to eat your pudding and yet to keep it.