ইন্দু। ফটোগ্রাফ।
ক্ষান্তমণি। কার?
ইন্দু। বিনোদবাবুর। নিশ্চয় তোমাদের এই গলি পার হয়ে আসবার সময় রাস্তায় পড়ে গেছে। আমি যাই খুঁজে আনি গে।
ক্ষান্তমণি। ছি ছি, রাস্তার মাঝে ছবি খুঁজতে গিয়ে লোক দাঁড় করিয়ে দিবি যে! সে ছবির এতই কিসের কদর?
ইন্দু। হায় হায়, দিদি যদি কেঁদে-কেটে অনর্থপাত করে?
ক্ষান্তমণি। তোর দিদি? কমল?
ইন্দু। হাঁ গো, তার হৃদয় তো পাষাণ নয়, সে যে বড়ো কোমল, কী জানি, আজ থেকে যদি সে হাঙ্গার স্ট্রাইক শুরু করে?
ক্ষান্তমণি। সে আবার কী?
ইন্দু। যাকে সংস্কৃত ভাষায় বলে প্রায়োপবেশন।
ক্ষান্তমণি। আর জ্বালাস নে, বাংলা ভাষায় কী বলে তাই বল্-না।
ইন্দু। তাকে বলে উপোস ক'রে মরা।
ক্ষান্তমণি। আমি যেন কমলকে জানি নে — তুই হলেও বা সম্ভব হত। কেন ভাই, আসল জিনিস যখন ধরা দিয়েছে তখন ছবিটার এত খোঁজ কেন?
ইন্দু। আসল জিনিসকে ডেস্কে বসিয়ে রাখা যায় না, দেরাজে বন্ধ করা চলে না। আসল জিনিসের মেজাজের ঠিক নেই — বেশি খিদে পেলে ভালোবাসার কথা তার মনে থাকে না, বেশি ভালোবাসা পেলে অস্থির করে তোলে — কিন্তু —
ক্ষান্তমণি। আচ্ছা আচ্ছা, তোর সেই ‘ কিন্তু ' এত বেশি দুর্লভ নয়।
ইন্দু। ক্ষান্তদিদি, তোমার সেই বন্ধু তিনটির মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তিটি কে বলো-না।
ক্ষান্তমণি। খুব সম্ভব গদাই। সে ওদের সঙ্গে প্রায়ই থাকে বটে।
ইন্দু। বাজি রাখতে পারি, সে গদাই নয়। তার নাম যদি গদাই হয় তা হলে আমার নাম মাতঙ্গিনী।
ক্ষান্তমণি। তা হলে ললিত।
ইন্দু। এই এতক্ষণে নামটি পাওয়া গেল। ললিত তার আর সন্দেহ নেই।
ক্ষান্তমণি। চেহারাটা সুন্দর তো?
ইন্দু। সুন্দর বৈকি।
ক্ষান্তমণি। পাতলা, চোখে চশমা আছে?
ইন্দু। হাঁ হাঁ, চশমা আছে। আর, সব কথাতেই মুচকে মুচকে হাসে।
ক্ষান্তমণি। তবে আমাদের ললিত চাটুজ্জে, তাতে আর সন্দেহ নেই।
ইন্দু। ললিত চাটুজ্জে না হয়ে যায় না। বাজি রাখতে পারি।
ক্ষান্তমণি। কলুটোলার নিত্যকালী চাটুজ্জের ছেলে। ছোকরাটি কিন্তু মন্দ নয় ভাই। এম. এ. পাস করে জলপানি পাচ্ছে।
ইন্দু। জলপানি পাবার মতোই চেহারা বটে। তা ওদের ঘরে স্ত্রী পুত্র পরিবার কেউ নেই নাকি? লক্ষ্মীছাড়ার মতো টো টো করে বেড়ায় কেন?