গদাই। আজকাল বেশি পড়তে হয় বলে রোজ খানিকটা করে এক্সেসাইজ্ করে নিই —
শিবচরণ। রাস্তার ধারে কাঠের পুতুলের মতো হাঁ করে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার এক্সেসাইজ্ হয়, বাড়িতে তোমার দাঁড়াবারও জায়গা নেই!
গদাই। অনেকটা চলে এসে শ্রান্ত হয়েছিলুম, তাই একটু বিশ্রাম করা যাচ্ছিল।
শিবচরণ। শ্রান্ত হয়েছিস, তবে ওঠ্ আমার গাড়িতে। যা, এখনই কালেজে যা। গেরস্তর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শ্রান্তি দূর করতে হবে না।
গদাই। সে কী কথা! আপনি কী করে যাবেন?
শিবচরণ। আমি যেমন করে হোক যাব, তুই এখন গাড়িতে ওঠ্। ওঠ্ বলছি।
গদাই। অনেকটা জিরিয়ে নিয়েছি, এখন আমি অনায়াসে হেঁটে যেতে পারব।
শিবচরণ। না, সে হবে না — তুই ওঠ্, আমি দেখে যাই —
গদাই। আপনার যে ভারি কষ্ট হবে।
শিবচরণ। সেজন্য তোকে কিছু ভাবতে হবে না, তুই ওঠ্ গাড়িতে। এ ঝুড়িটা কিসের। তুই কি বাগবাজারে তরকারি ফেরি করে বেড়াস নাকি?
গদাই। তাই তো, ওটা তরকারিই তো বটে। কী আশ্চর্য! কেমন করে এল! এ তো মুলো দেখছি, নটেশাকও আছে। এক কাজ করি বাবা — গেরস্তর জিনিস, ঘরের ভিতরে পৌঁছে দিয়ে আসি-না।
শিবচরণ। আর তোমার পরোপকার করতে হবে না। এ ঝুড়ির কিনারা আমি করে দিচ্ছি, তুই এখন গাড়িতে ওঠ্।
গদাই। ( স্বগত) সর্বনাশ! বুড়িটা এর মধ্যে বেগ্নি নিয়ে উপস্থিত না হলে বাঁচি। আজ সকাল বেলাটা বেশ জমে আসছিল, মাটি করে দিলে। সাত জোড়া মোজা নিয়ে করি কী! কাল দোকানদার সেজে ফিরিয়ে দিতে হবে।
শিবচরণ। তোর হাতে ওটা কিসের মোড়ক রে?
গদাই। আজ্ঞে ওটা —
শিবচরণ। দেখি না। ( হাত টানিয়া লইয়া) এ কী ব্যাপার!
গদাই। আজ্ঞে, উপহার দেবার জন্যে।
শিবচরণ। কাকে উপহার দিবি?
গদাই। আমার একটি ক্লাস্-ফ্রেন্ড্ —
শিবচরণ। ক্লাস্-ফ্রেন্ড্কে মেয়েদের মোজা দিবি!
গদাই। তার বিয়ে হচ্ছ কিনা, তাই —
শিবচরণ। তাই, কার অনেক দিনের পরা পুরোনো ময়লা মোজা তাকে দিবি? তাও আবার সাত জোড়া!
গদাই। সেকেন্ড্হ্যান্ড্ নিলেম থেকে শস্তায় কিনেছি, আপনার কাছ থেকে টাকা চাইতে ভয় করে।
শিবচরণ। চাইলেই পেতিস কিনা! ফিরিয়ে দে। ছি ছি! ঐ নোংরা মোজাগুলো নিয়ে বেড়াচ্ছিস। কী জানি কোন্ ব্যামোর ছোঁয়াচ আছে ওর মধ্যে —
গদাই। আমারও সে ভয় আছে বাবা, ছোঁয়াচ যে কোথায় কী থাকে কিচ্ছু বলবার জো নেই। এখনো ফিরিয়ে দিতে পারব, কালই নাহয় —