বিনোদ। এরা বেছে বেছে এত দেশ থাকতে আমাকে উকিল পাকড়ালে কী ক'রে আমি তাই ভাবছি। আমার অদৃষ্ট ভালো বলতে হবে। এখন টিকতে পারলে হয়।
ঘোমটা পরিয়া কমলের প্রবেশ
বিনোদ। ( স্বগত) আহা, মুখটি দেখতে পেলে বেশ হত! (প্রকাশ্যে) আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?
কমল। হাঁ। আপনি বোধ হয় আমার অবস্থা সবই জানেন।
বিনোদ। কিছু-কিছু শুনেছি। ( স্বগত) গলাটা যে তারই মতন শোনাচ্ছে। সব মেয়েরই গলা প্রায় একরকম দেখছি। কিন্তু তার চেয়ে কত মিষ্টি!
কমল। সে কথা থাক্। আমার যা-কিছু সমস্তর কর্তৃত্বভার আপনাকে নিতে হবে।
বিনোদ। আপনি যে আমাকে এত বড়ো বিশ্বাসের যোগ্য মনে করলেন, এতেই আমাকে যোগ্যতা দেবে। আপনার বিশ্বাসই আমাকে মানুষ করে তুলবে।
কমল। আপনাকে আর বেশিক্ষণ আবদ্ধ করে রাখতে চাই নে, আপনার বোধ করি অনেক কাজ আছে —
বিনোদ। না না, সেজন্যে আপনি ভাববেন না। আমার সহস্র কাজ থাকলেও সমস্ত পরিত্যাগ করে আমি —
কমল। কাল পয়লা তারিখ, কাল থেকে তা হলে আমার কর্মচারীদের কাছ থেকে আপনি বুঝ-পড়ে নিন। নিবারণবাবু এখনি আসবেন, তিনি এলে তাঁর কাছ থেকেও অনেকটা জেনেশুনে নিতে পারবেন।
বিনোদ। নিবারণবাবু!
কমল। আপনি তাঁকে চেনেন বোধ হয়, কারণ, তিনিই প্রথমে আপনার জন্যে আমার কাছে অনুরোধ করে দিয়েছেন।
বিনোদ। ( স্বগত) ছি ছি ছি, বড়ো লজ্জা বোধ হচ্ছে। আমি কালই আমার স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে আসব। এখন তো আমার কোনো অভাব নেই।
কমল। আপনি বরঞ্চ নীচের ঘরে একটু অপেক্ষা করুন, নিবারণবাবু এলেই খবর পাঠিয়ে দেব। আর-একটা কথা, আমি যে কাল আপনাকে চিঠিতে জানিয়েছি, আপনার বন্ধু ললিত চাটুজ্জেকে একবার এখানে আনতে, সেটার কিছু ব্যবস্থা হয়েছে?
বিনোদ। সব ঠিক আছে। তিনি এলেন ব'লে, আর দেরি নেই।
কমল। তবে আমি আসি।
[ প্রস্থান
বিনোদ। হায় হায়, এতটাই যখন বিশ্বাস করলেন তখন কেবল আর তিন ইঞ্চি পরিমাণ বিশ্বাস ক'রে ঘোমটা খুললে বাঁচা যেত, তা হলেই চোখদুটি দেখতে পেতুম। কিন্তু নিবারণবাবুকে নিয়ে কী করা যায়।