তা হলে মহারাজ ঐ হতভাগ্যদের —
ঐ হতভাগ্যদের প্রতি এই হতভাগ্যের উপদেশ এই যে, কাল-ধীবরের জাল ছিন্ন করবার জন্য ছটফট করা বৃথা, আজই হোক কালই হোক সে টেনে তুলবেই।
অতএব —
অতএব শ্রুতিভূষণকে প্রয়োজন এবং তাঁর বৈরাগ্যবারিধি পুঁথি।
প্রজারা তা হলে দুর্ভিক্ষ —
দেখো মন্ত্রী, ভিক্ষা তো অন্নের নয়, ভিক্ষা আয়ুর। সেই ভিক্ষায় জগৎ জুড়ে দুর্ভিক্ষ — কী রাজার কী প্রজার — কে কাকে রক্ষা করবে।
অতএব —
অতএব শ্মশানেশ্বর শিব যেখানে ডমরুধ্বনি করছেন সেইখানেই সকলের সব প্রার্থনা ছাইচাপা পড়বে — তবে কেন মিছে গলা ভাঙা। এই যে শ্রুতিভূষণ, প্রণাম।
শুভমস্তু।
শ্রুতিভূষণমশায়, মহারাজকে একটু বুঝিয়ে বলবেন যে অবসাদগ্রস্ত নিরুৎসাহকে লক্ষ্মী পরিহার করেন।
শ্রুতিভূষণ, মন্ত্রী আপনাকে কী বলছেন।
উনি বলছেন লক্ষ্মীর স্বভাবসম্বন্ধে মহারাজকে কিছু উপদেশ দিতে।
আপনার উপদেশ কী।
বৈরাগ্যবারিধিতে একটি চৌপদী আছে —
যে পদ্মে লক্ষ্মীর বাস, দিন-অবসানে
সেই পদ্ম মুদে দল সকলেই জানে।
গৃহ যার ফুটে আর মুদে পুনঃপুনঃ
সে লক্ষ্মীরে ত্যাগ করো, শুন মূঢ় শুন।
অহো, আপনার উপদেশের এক ফুৎকারেই আশা-প্রদীপের জ্বলন্ত শিখা নির্বাপিত হয়ে যায়। আমাদের আচার্য বলেছেন না —
দন্তং গলিতং পলিতং মুণ্ডং
তদপি ন মুঞ্চতি আশাভাণ্ডং।
মহারাজ, আশার কথা যদি তুললেন তবে বারিধি থেকে আর-একটি চৌপদী শোনাই —
শৃঙ্খল বাঁধিয়া রাখে এই জানি সবে,
আশার শৃঙ্খল কিন্তু অদ্ভুত এ ভবে।
সে যাহারে বাঁধে সেই ঘুরে মরে পাকে,
সে-বন্ধন ছাড়ে যারে স্থির হয়ে থাকে।
হায় হায় অমূল্য আপনার বাণী! শ্রুতিভূষণকে এক সহস্র স্বর্ণমুদ্রা এখনি — ও কি মন্ত্রী, আবার কারা গোল করছে।
সেই দুর্ভিক্ষগ্রস্ত প্রজারা।