ইন্দু। কী, বল্-না ভাই!
কমল। একবার গদাইবাবুর সঙ্গে তুই দেখা কর্।
ইন্দু। কেন দিদি, তাতে আমার কী প্রায়শ্চিত্তটা হবে?
কমল। তোর যখন যা ইচ্ছে তাই করেছিস ইন্দু, কাকা তাতে বাধা দেন নি। আজ কাকার একটি অনুরোধ রাখবি নে?
ইন্দু। রাখব ভাই, তিনি যা বলবেন তাই শুনব।
কমল। তবে চল্, তোর চুলটা একটু ভালো করে দিই। নিজের উপরে এতটা অযত্ন করিস্ নে।
[ প্রস্থান
গদাইয়ের প্রবেশ
গদাই। চন্দর যখন পীড়াপীড়ি করছে তা নাহয় একবার ইন্দুমতীর সঙ্গে দেখা করাই যাক। শুনেছি তিনি বেশ বুদ্ধিমতী সুশিক্ষিতা মেয়ে — তাঁকে আমার অবস্থা বুঝিয়ে বললে তিনি নিজেই আমাকে বিবাহ করিতে অসম্মত হবেন। তা হলে আমার ঘাড় থেকে দায়টা যাবে — বাবাও আর পীড়াপীড়ি করবেন না।
মুখে ঘোমটা টানিয়া ইন্দুমতীর প্রবেশ
ইন্দু। ( স্বগত) বাবা যখন বলেছেন তখন দেখা করতেই হবে, কিন্তু কারো অনুরোধে তো পছন্দ হয় না। বাবা কখনোই আমার ইচ্ছের বিরূদ্ধে বিয়ে দেবেন না।
গদাই। ( নতশিরে ইন্দুর প্রতি) আমাদের মা-বাপ আমাদের পরস্পরের বিবাহের জন্যে পীড়াপীড়ি করছেন, কিন্তু আপনি যদি ক্ষমা করেন তো আপনাকে একটি কথা বলি —
ইন্দু। একি! এ যে ললিতবাবু! (উঠিয়া দাঁড়াইয়া) ললিতবাবু, আপনাকে বিবাহের জন্যে যাঁরা পীড়াপীড়ি করছেন তাঁদের আপনি জানাবেন, বিবাহ এক পক্ষের সম্মতিতে হয় না। আমাকে আপনার বিবাহের কথা বলে কেন অপমান করছেন?
গদাই। একি! এ যে কাদম্বিনী! (উঠিয়া দাঁড়াইয়া) আপনি এখানে আমি তা জানতুম না। আমি মনে করেছিলুম, নিবারণবাবুর কন্যা ইন্দুমতীর সঙ্গে আমি কথা কচ্ছি — কিন্তু আমার যে এমন সৌভাগ্য হবে —
ইন্দু। ললিতবাবু, আপনার সৌভাগ্য আপনি মনে মনে রেখে দেবেন, সে কথা আমার কাছে প্রচার করবার দরকার দেখি নে।
গদাই। আপনি কাকে ললিতবাবু বলছেন? ললিতবাবু বারান্দায় বিনোদের সঙ্গে গল্প করছেন — যদি আবশ্যক থাকে তাঁকে ডেকে নিয়ে আসি।
ইন্দু। না না, তাঁকে ডাকতে হবে না। আপনি তা হলে কে!
গদাই। এর মধ্যেই ভুলে গেলেন? চন্দ্রবাবুর বাসায় আপনি নিজে আমাকে চাকরি দিয়েছেন, আমি তৎক্ষণাৎ তা মাথায় করে নিয়েছি — ইতিমধ্যে বরখাস্ত হবার মতো কোনো অপরাধ করি নি তো।
ইন্দু। আপনার নাম কি ললিতবাবু নয়?
গদাই। যদি পছন্দ করেন তো ঐ নামই শিরোধার্য করে নিতে পারি, কিন্তু বাপ-মায়ে আদর করে আমার নাম রেখেছিলেন গদাই।