সুরমা। না না, ও-কথা তোমার মুখে আমার সহ্য হয় না। ভগবান তোমাকে রাজার ছেলে করে পাঠিয়েছেন, সে-কথা বুঝি অমন করে উড়িয়ে দিতে আছে? না হয় দুঃখই পেতে হবে — তা বলে-
উদয়াদিত্য। আমি দুঃখের পরোয়া রাখি নে। তুমি আমার ঘরে এসেছ, তোমাকে সুখী করতে পারি নে আমার পৌরুষে সেই ধিক্কার বাজে।
সুরমা। যে সুখ দিয়েছ তাই যেন জন্ম-জন্মান্তর পাই।
উদয়াদিত্য। সুখ যদি পেয়ে থাক তো সে নিজের গুণে, আমার শক্তিতে নয়। এ-ঘরে আমার আদর নেই বলে তোমারও যে অপমান ঘটে। এমন কি, মাও যে তোমাকে অবজ্ঞা করেন।
সুরমা। আমার সব সম্মান যে তোমার প্রেমে, সে তো কেউ কাড়তে পারে নি।
উদয়াদিত্য। তোমার পিতা শ্রীপুররাজ কিনা যশোরের অধীনতা স্বীকার করেন না-, সেই হয়েছে তোমার অপরাধ — মহারাজ তোমার উপরে রাগ দেখিয়ে তার শোধ তুলতে চান।
নেপথ্যে। দাদা, দাদা।
উদয়াদিত্য। ও কে ও। বিভা বুঝি! (দ্বার খুলিয়া) কী বিভা! কী হয়েছে? এত রাত্রে কেন?
বিভা। ( চুপি চুপি কিছু বলিয়া সরোদনে) দাদা কী হবে?
উদয়াদিত্য। ভয় নেই আমি যাচ্ছি।
বিভা। না না, তুমি যেয়ো না।
উদয়াদিত্য। কেন বিভা?
বিভা। বাবা যদি জানতে পারেন?
উদয়াদিত্য। জানতে পারবেন তো কী? তাই বলে বসে থাকব?
বিভা। যদি রাগ করেন?
সুরমা। ছি বিভা, এখন সে-কথা কি ভাববার সময়?
বিভা। ( উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া) দাদা, তুমি যেয়ো না, তুমি লোক পাঠিয়ে দাও। আমার ভয় করছে।
উদয়াদিত্য। ভয় করবার সময় নেই বিভা!
[ প্রস্থান
বিভা। কী হবে ভাই? বাবা জানতে পারলে জানি নে কী কাণ্ড করবেন।
সুরমা। যাই করুন না বিভা, নারায়ণ আছেন।
মন্ত্রী। মহারাজ, কাজটা কি ভালো হবে?
প্রতাপাদিত্য। কোন্ কাজটা?
মন্ত্রী। আজ্ঞে, কাল যেটা আদেশ করেছিলেন।