প্রতাপাদিত্য। কাল কী আদেশ করেছিলুম?
মন্ত্রী। আপনার পিতৃব্য সম্বন্ধে-
প্রতাপাদিত্য। আমার পিতৃব্য সম্বন্ধে কী?
মন্ত্রী। মহারাজ আদেশ করেছিলেন, যখন রাজা বসন্ত রায় যশোরে আসবার পথে শিমুলতলির চটিতে আশ্রয় নেবেন, তখন-
প্রতাপাদিত্য। তখন কী? কথাটা শেষ করেই ফেলো।
মন্ত্রী। তখন দুজন পাঠান গিয়ে-
প্রতাপাদিত্য। হাঁ-
মন্ত্রী। তাঁকে নিহত করবে।
প্রতাপাদিত্য। নিহত করবে! অমরকোষ খুঁজে বুঝি আর কোনো কথা খুঁজে পেলে না? নিহত করবে! মেরে ফেলবে কথাটা মুখে আনতে বুঝি বাধছে?
মন্ত্রী। মহারাজ আমার ভাবটি ভালো বুঝতে পারেন নি।
প্রতাপাদিত্য। বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছি।
মন্ত্রী। আজ্ঞে মহারাজ আমি-
প্রতাপাদিত্য। তুমি শিশু! খুন করাকে তুমি জুজু বলে জান! তোমার বুড়ি দিদিমার কাছে শিখেছ খুন করাটা পাপ। খুন করাটা যেখানে ধর্ম, সেখানে না করাটাই পাপ, এটা এখনো তোমার শিখতে বাকি আছে। যে মুসলমান আমাদের ধর্ম নষ্ট করেছে, তাদের যারা মিত্র তাদের বিনাশ না করাই অধর্ম। পিতৃব্য বসন্ত রায় নিজেকে ম্লেচ্ছের দাস বলে স্বীকার করেছেন। ক্ষত হলে নিজের বাহুকে কেটে ফেলা যায়, সে-কথা মনে রেখো মন্ত্রী।
মন্ত্রী। যে আজ্ঞে।
প্রতাপাদিত্য। অমন তাড়াতাড়ি ‘ যে আজ্ঞে ' বললে চলবে না। তুমি মনে করছ নিজের পিতৃব্যকে বধ করা সকল অবস্থাতেই পাপ। ‘ না ' বলো না, ঠিক এই কথাটাই তোমার মনে জাগছে। কিন্তু মনে করো না এর উত্তর নেই। পিতার অনুরোধে ভৃগু তাঁর মাকে বধ করেছিলেন, আর ধর্মের অনুরোধে আমি আমার পিতৃব্যকে কেন বধ করব না?
মন্ত্রী। কিন্তু দিল্লীশ্বর যদি শোনেন তবে-
প্রতাপাদিত্য। আর যাই কর, দিল্লীশ্বরের ভয় আমাকে দেখিয়ো না।
মন্ত্রী। প্রজারা জানতে পারলে কী বলবে?
প্রতাপাদিত্য। জানতে পারলে তো।
মন্ত্রী। এ-কথা কখনোই চাপা থাকবে না।
প্রতাপাদিত্য। দেখো মন্ত্রী, কেবল ভয় দেখিয়ে আমাকে দুর্বল করে তোলবার জন্যেই কি তোমাকে রেখেছি?
মন্ত্রী। মহারাজ, যুবরাজ উদয়াদিত্য-
প্রতাপাদিত্য। দিল্লীশ্বর গেল, প্রজারা গেল, শেষকালে উদয়াদিত্য! সেই স্ত্রৈণ বালকটার কথা আমার কাছে তুলো না।
মন্ত্রী। তাঁর সম্বন্ধে একটি সংবাদ আছে। কাল তিনি রাত্রে ঘোড়ায় চড়ে একলা বেরিয়েছেন, এখনো ফেরেন নি।
প্রতাপাদিত্য। কোন্ দিকে গেছে?
মন্ত্রী। পুবের দিকে।