বসন্ত রায়। রাম, রাম!
উদয়াদিত্য। বলে যাও।
পাঠান। আমার ভাই গ্রামে ডাকাত পড়েছে বলে কেঁদেকেটে আপনার অনুচরদের নিয়ে গেলেন। আমার উপরেই এই কাজের ভার ছিল। কিন্তু মহারাজ, যদিও রাজার আদেশ, তবু এমন কাজে আমার প্রবৃত্তি হল না। কারণ আমাদের কবি বলেন, রাজা তো পৃথিবীরই রাজা, তাঁর আদেশে পৃথিবী নষ্ট করতে পার, কিন্তু সাবধান, স্বর্গের এক কোণও নষ্ট করো না। গরিব এখন মহারাজের শরণাগত। দেশে ফিরে গেলে আমার সর্বনাশ হবে।
বসন্ত রায়। তোমাকে পত্র দিচ্ছি তুমি এখান থেকে রায়গড়ে চলে যাও।
উদয়াদিত্য। দাদামশায়, তুমি এখান থেকে যশোরে যাবে নাকি?
বসন্ত রায়। হাঁ ভাই।
উদয়াদিত্য। সে কী কথা!
বসন্ত রায়। আমি তো ভাই ভবসমুদ্রের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছি — একটা ঢেউ লাগলেই বাস। আমার ভয় কাকে? কিন্তু আমি যদি না যাই তবে প্রতাপের সঙ্গে ইহজন্মে আমার আর দেখা হওয়া শক্ত হবে। এইযে ব্যাপারটা ঘটল এর সমস্ত কালি মুছে ফেলতে হবে যে — এইখেন থেকেই যদি রায়গড়ে ফিরে যাই তা হলে সমস্তই জমে থাকবে। চল্ দাদা চল্। রাত শেষ হয়ে এল।
প্রতাপাদিত্য। দেখো দেখি মন্ত্রী সে পাঠান দুটো এখনও এল না।
মন্ত্রী। সেটা তো আমার দোষ নয় মহারাজ!
প্রতাপাদিত্য। দোষের কথা হচ্ছে না। দেরি কেন হচ্ছে তুমি কী অনুমান কর তাই জিজ্ঞাসা করছি।
মন্ত্রী। শিমুলতলি তো কাছে নয়। কাজ সেরে আসতে দেরি তো হবেই।
প্রতাপাদিত্য। উদয় কাল রাত্রেই বেরিয়ে গেছে?
মন্ত্রী। আজ্ঞে হাঁ সে তো পূর্বেই জানিয়েছি।
প্রতাপাদিত্য। কী উপযুক্ত সময়েই জানিয়েছ। আমি তোমাকে নিশ্চয় বলছি মন্ত্রী এ সমস্তই সে তার স্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে করেছে। কী বোধ হয়?
মন্ত্রী। কেমন করে বলব মহারাজ?
প্রতাপাদিত্য। আমি কি তোমার কাছে বেদবাক্য শুনতে চাচ্ছি? তুমি কী আন্দাজ কর তাই জিজ্ঞাসা করছি।
এক জন পাঠানের প্রবেশ
প্রতাপাদিত্য। কী হল?
পাঠান। মহারাজ, এতক্ষণে কাজ নিকেশ হয়ে গেছে।
প্রতাপাদিত্য। সে কী রকম কথা? তবে তুমি জান না?