এখন সেই বুড়োটার খবর দাও।
মাঝি। সেই যে বুড়িটা রাস্তার মোড়ে ব'সে চরকা কাটে তাকে জিজ্ঞাসা করলে হয় না?
জিজ্ঞাসা করেছিলুম — সে বলে, সামনে দিয়ে কত ছায়া যায়, কত ছায়া আসে, কাকেই বা চিনি।
ও যে একই জায়গায় ব'সে থাকে, ও কারো ঠিকানা জানে না।
মাঝি, তুমি ঘাটে ঘাটে অনেক ঘুরেছ, তুমি নিশ্চয় বলতে পার কোথায় সেই —
মাঝি। ভাই, আমার ব্যাবসা হচ্ছে পথ ঠিক করা — কাদের পথ, কিসের পথ, সে আমার জানবার দরকার হয় না। আমার দৌড় ঘাট পর্যন্ত, ঘর পর্যন্ত না।
আচ্ছা চলো তো, পথগুলো পরখ করে দেখা যাক।
কোন্ খেপামির তালে নাচে
পাগল সাগরনীর।
সেই তালে যে পা ফেলে যাই,
রইতে নারি স্থির।
চল্ রে সোজা, ফেল্ রে বোঝা,
রেখে দে তোর রাস্তা খোঁজা,
চলার বেগে পায়ের তলায়
রাস্তা জেগেছে॥
মাঝি। ঐ যে কোটাল আসছে, ওকে জিজ্ঞাসা করলে হয় — আমি পথের খবর জানি, ও পথিকের খবর জানে।
ওহে কোটাল হে, কোটাল হে।
কোটাল। কে গো, তোমরা কে।
আমাদের যা দেখছ তাই, পরিচয় দেবার কিছুই নেই।
কোটাল। কী চাই।
চন্দ্রহাস। বুড়োকে খুঁজতে বেরিয়েছি।
কোটাল। কোন্ বুড়োকে।
সেই চিরকালের বুড়োকে।
কোটাল। এ তোমাদের কেমন খেয়াল। তোমরা খোঁজ তাকে? সে-ই তো তোমাদের খোঁজ করছে।
চন্দ্রহাস। কেন বলো তো।
কোটাল। সে নিজের হিমরক্তটা গরম করে নিতে চায়, তপ্ত যৌবনের প'রে তার বড়ো লোভ।
চন্দ্রহাস। আমরা তাকে কষে গরম করে দেব, সে-ভাবনা নেই। এখন দেখা পেলে হয়। তুমি তাকে দেখেছ?
কোটাল। আমার রাতের বেলার পাহারা — দেখি ঢের লোক, চেহারা বুঝি নে। কিন্তু বাপু, তাকেই সকলে বলে ছেলেধরা, উলটে তোমরা তাকে ধরতে চাও — এটা তো পুরো পাগলামি।
দেখেছ? ধরা পড়েছি। পাগলামিই তো। চিনতে দেরি হয় না।