রামমোহনের প্রবেশ
রামচন্দ্র। কী রামমোহন— কী করবি বল্।
রামমোহন। যতক্ষণ আমার প্রাণ আছে ততক্ষণ-
রামচন্দ্র। আরে তোর প্রাণ নিয়ে আমার কী হবে? এখন পালাবার উপায় কী?
রামমোহন। মহারাজ, তুমি যদি ভয় না কর, আমি এক কাজ করতে পারি।
রামচন্দ্র। কী বল্।
রামমোহন। তোমাকে পিঠে করে নিয়ে রাজবাটীর ছাতের উপর থেকে আমি খালের মধ্যে লাফিয়ে পড়তে পারি।
বসন্ত রায়। কী সর্বনাশ! সে কি হয়।
রামচন্দ্র। না সে হবে না। আর একটা সহজ উপায় কিছু বল্।
রামমোহন। যুবরাজ, আমাকে গোটাকতক মোটা চাদর এনে দাও— পাকিয়ে শক্ত করে দক্ষিণের দরজার সঙ্গে বেঁধে নিচে ঝুলিয়ে দিই।
উদয়াদিত্য। ঠিক বলেছিস রামমোহন। বিপদের সময় সব চেয়ে সহজ কথাটাই মাথায় আসে না। চল্ চল্।
বিভা। মোহন, কোনো ভয় নেই তো?
রামমোহন। কোনো ভয় নেই মা! আমি দড়ি বেয়ে স্বচ্ছন্দে নামিয়ে নিয়ে যাব। জয় মা কালী।
মহিষী। কী হল বুঝতে পারছি নে তো। সকলকেই খাওয়ালুম কিন্তু মোহনকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি-নে কেন? বামী।
বামীর প্রবেশ
এদিককার খাওয়াদাওয়া তো সব শেষ হল মোহনকে খুঁজে পাচ্ছিনে কেন?
বামী। মা তুমি অত ভাবছ কেন? তুমি শুতে যাও, রাত যে পুইয়ে এল, তোমার শরীরে সইবে কেন?
মহিষী। সে কি হয়। আমি যে তাকে নিজে বসিয়ে খাওয়াব বলে রেখেছি।
বামী। সে নিশ্চয় রাজকুমারীর মহলে গেছে, তিনি তাকে খাইয়েছেন। তুমি চলো, শুতে চলো।
মহিষী। আমি তো ও-মহলে খোঁজ করতে যাচ্ছিলুম, দেখি সব দরজা বন্ধ — এর মানে কী, কিছু তো বুঝতে পারছি নে।
বামী। বাড়িতে গোলমাল দেখে রাজকুমারী তাঁর মহলের দরজা বন্ধ করেছেন। অনেক দিন পরে জামাই এসেছেন, আজ লোকজনের ভিড় সইবে কেন? চলো তুমি শুতে চলো।
মহিষী। কী জানি বামী আজ ভালো লাগছে না। প্রহরীদের ডাকতে বললুম, তাদের কারো কোনো সাড়াই পাওয়া গেল না।
বামী। যাত্রা হচ্ছে, তারা তাই আমোদ করতে গেছে।
মহিষী। মহারাজ জানতে পারলে যে তাদের আমোদ বেরিয়ে যাবে। উদয়ের মহলও যে বন্ধ, তারা ঘুমিয়েছে বুঝি!