সুরমা। তা এলই বা দাদা।
বিভা। না, আমি যাই বউরানী!
[ প্রস্থান
সুরমা। আজ ওর দাদার কাছেও মুখ দেখাতে পারছে না।
উদয়াদিত্যের প্রবেশ
সুরমা। আজ ধনঞ্জয় বৈরাগীকে আমাদের মন্দিরে গান গাবার জন্যে ডেকে পাঠিয়েছি।
উদয়াদিত্য। সে তো হবে না।
সুরমা। কেন?
উদয়াদিত্য। তাঁকে মহারাজ কয়েদ করেছেন।
সুরমা। কী সর্বনাশ, অমন সাধুকে কয়েদ করেছেন?
উদয়াদিত্য। ওটা আমার উপর রাগ করে। তিনি জানেন আমি বৈরাগীকে ভক্তি করি— মহারাজের কঠিন আদেশেও আমি তাঁর গায়ে হাত দিই নি— সেই জন্যে আমাকে দেখিয়ে দিলেন রাজকার্য কেমন করে করতে হয়।
সুরমা। কিন্তু এগুলো যে অমঙ্গলের কথা— শুনলে ভয় হয়। কী করা যাবে?
উদয়াদিত্য। মন্ত্রী আমার অনুরোধে বৈরাগীকে গারদে না দিয়ে তাঁর বাড়িতে লুকিয়ে রাখতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু ধনঞ্জয় কিছুতেই রাজি হলেন না। তিনি বললেন আমি গারদেই যাব সেখানে যত কয়েদি আছে তাদের প্রভুর নামগান শুনিয়ে আসব। তিনি যেখানেই থাকুন তাঁর জন্যে কাউকেই ভাবতে হবে না— তাঁর ভাবনার লোক উপরে আছেন।
সুরমা। মাধবপুরের প্রজাদের জন্যে আমি সব সিধে সাজিয়ে রেখেছি— কোথায় সব পাঠাব?
উদয়াদিত্য। গোপনে পাঠাতে হবে। নির্বোধগুলো আমাকে রাজা রাজা করে চেঁচাচ্ছিল, মহারাজ সেটা শুনতে পেয়েছেন— নিশ্চয় তাঁর ভালো লাগে নি। এখন তোমার ঘর থেকে তাদের খাবার পাঠানো হলে মনে কী সন্দেহ করবেন বলা যায় না।
সুরমা। আচ্ছা সে আমি বিভাকে দিয়ে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু আমি ভাবছি, কাল রাত্রে যারা পাহারায় ছিল সেই সীতারাম-ভাগবতের কী দশা হবে!
উদয়াদিত্য। মহারাজ ওদের গায়ে হাত দেবেন না— সে ভয় নেই।
সুরমা। কেন?
উদয়াদিত্য। মহারাজ কখনো ছোটো শিকারকে বধ করেন না। দেখলে না, রমাই ভাঁড়কে তিনি ছেড়ে দিলেন?
সুরমা। কিন্তু শাস্তি তো তিনি একজন কাউকে না দিয়ে থাকবেন না।
উদয়াদিত্য। সে তো আমি আছি।
সুরমা। ও-কথা বলো না।
উদয়াদিত্য। বলতে বারণ কর তো বলব না। কিন্তু বিপদের জন্যে কি প্রস্তুত হতে হবে না?
সুরমা। আমি থাকতে তোমার বিপদ ঘটবে কেন? সব বিপদ আমি নেব।
উদয়াদিত্য। তুমি নেবে? তার চেয়ে বিপদ আমার আর আছে নাকি? যাই হোক সীতারাম-ভাগবতের অন্নবস্ত্রের একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সুরমা। তুমি কিন্তু কিছু করো না। তাদের জন্যে যা করবার ভার সে আমি নিয়েছি।