উদয়াদিত্য। না, না, এতে তুমি হাত দিয়ো না।
সুরমা। আমি দেবো না তো কে দেবে? ও তো আমার কাজ। আমি সীতারাম-ভাগবতের স্ত্রীদের ডেকে পাঠিয়েছি।
উদয়াদিত্য। সুরমা, তুমি বড়ো অসাবধান।
সুরমা। আমার জন্যে তুমি কিছু ভেবো না। আসল ভাবনার কথা কী জান?
উদয়াদিত্য। কী বলো দেখি?
সুরমা। ঠাকুরজামাই তাঁর ভাঁড়কে নিয়ে যে কাণ্ডটি করলেন বিভা সেজন্যে লজ্জায় মরে গেছে।
উদয়াদিত্য। লজ্জার কথা বই কি।
সুরমা। এতদিন স্বামীর অনাদরে বাপের'পরেই তার অভিমান ছিল— আজ যে তার সে অভিমান করবারও মুখ রইল না। বাপের নিষ্ঠুরতার চেয়ে তার স্বামীর এই নীচতা তাকে অনেক বেশি বেজেছে। একে তো ভারি চাপা মেয়ে, তার পরে এই কাণ্ড। আজ থেকে দেখো, ওর স্বামীর কথা আমার কাছেও বলতে পারবে না। স্বামীর গর্ব যে স্ত্রীলোকের ভেঙেছে জীবন তার পক্ষে বোঝা, বিশেষত বিভার মতো মেয়ে।
উদয়াদিত্য। ভগবান বিভাকে দুঃখ যথেষ্ট দিলেন, তেমনি সহ্য করবার শক্তিও দিয়েছেন।
সুরমা। সে-শক্তির অভাব নেই— বিভা তোমারই তো বোন বটে!
উদয়াদিত্য। আমার শক্তি যে তুমি।
সুরমা। তাই যদি হয় তো সে'ও তোমারই শক্তিতে।
উদয়াদিত্য। আমার কেবলই ভয় হয় তোমাকে যদি হারাই তাহলে-
সুরমা। তাহলে তোমার কোনো অনিষ্ট হবে না। দেখো এক দিন ভগবান প্রমাণ করিয়ে দেবেন যে, তোমার মহত্ত্ব একলা তোমাতেই আছে।
উদয়াদিত্য। আমার সে-প্রমাণে কাজ নেই।
সুরমা। ভাগবতের স্ত্রী অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে।
উদয়াদিত্য। আচ্ছা চললুম কিন্তু দেখো।
[ প্রস্থান
ভাগবতের স্ত্রীর প্রবেশ
সুরমা। ভোর-রাত্রে আমি যে টাকা আর কাপড় পাঠিয়েছি তা তোদের হাতে গিয়ে পৌঁছেছে তো?
ভাগবতের স্ত্রী। পৌঁছেছে মা, কিন্তু তাতে আমাদের কতদিন চলবে? তোমরা আমাদের সর্বনাশ করলে।
সুরমা। ভয় নেই কামিনী! আমার যতদিন খাওয়াপরা জুটবে তোদেরও জুটবে। আজও কিছু নিয়ে যা। কিন্তু এখানে বেশিক্ষণ থাকিস নে।
[ উভয়ের প্রস্থান
মহিষী। এত বড়ো একটা কাণ্ড হয়ে গেল, আমি জানতেও পারলুম না।
বামী। মহারানীমা, জেনেই বা লাভ হত কী? তুমি তো ঠেকাতে পারতে না।