মহিষী। সকালে উঠে আমি ভাবছি হল কী— জামাই বুঝি রাগ করেই গেল। এদিকে যে এমন সর্বনাশের উদ্যোগ হচ্ছিল তা মনে আনতেও পারি নি। তুই সে-রাত্রেই জানতিস আমাকে ভাঁড়িয়েছিলি।
বামী। জানলে তুমি যে ভয়েই মরে যেতে। তা মা, আর ও-কথায় কাজ নেই— যা হয়ে গেছে সে হয়ে গেছে।
মহিষী। হয়ে চুকলে তো বাঁচতুম— এখন যে আমার উদয়ের জন্যে ভয় হচ্ছে।
বামী। ভয় খুব ছিল কিন্তু সে কেটে গেছে।
মহিষী। কী করে কাটল।
বামী। মহারাজার রাগ বউরানীর উপর পড়েছে। তিনিও আচ্ছা মেয়ে যা হোক— আমাদের মহারাজের ভয়ে যম কাঁপে কিন্তু ওঁর ভয় ডর নেই। যাতে তাঁরই উপরে সব রাগ পড়ে তিনি ইচ্ছে করেই যেন তার জোগাড় করছেন।
মহিষী। তার জন্যে তো বেশি জোগাড় করবার দরকার দেখি নে। মহারাজ যে ওকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচেন। এবারে আর তো ঠেকিয়ে রাখতে পারা যাবে না। তা তোকে যা বলেছিলুম সেটা ঠিক আছে তো?
বামী। সে-সমস্তই তৈরি হয়ে রয়েছে, সেজন্যে ভেবো না।
মহিষী। আর দেরি করিস নে আজকেরই যাতে-
বামী। সে আমাকে বলতে হবে না কিন্তু-
মহিষী। যা হয় হবে— অত ভাবতে পারি নে— ওকে বিদায় করতে পারলেই আপাতত মহারাজের রাগ পড়ে যাবে নইলে উদয়কে বাঁচাতে পারা যাবে না। তুই যা, শীঘ্র কাজ সেরে আয়।
বামী। আমি সে ঠিক করেই এসেছি— এতক্ষণে হয়তো-
মহিষী। কি জানি বামী, ভয়ও হয়।
প্রতাপাদিত্য। মহিষী।
মহিষী। কি মহারাজ?
প্রতাপাদিত্য। এ-সব কাজ কি আমাকে নিজের হাতে করতে হবে!
মহিষী। কী কাজ?
প্রতাপাদিত্য। ঐ যে আমি তোমাকে বলেছিলুম, শ্রীপুরের মেয়েকে তার পিত্রালয়ে দূর করে দিতে হবে-এ কাজটা কি আমার সৈন্য-সেনাপতি নিয়ে করতে হবে?
মহিষী। আমি তার জন্যে বন্দোবস্ত করছি।
প্রতাপাদিত্য। বন্দোবস্ত! এর আবার বন্দোবস্ত কিসের? আমার রাজ্যে ক-জন পালকির বেহারা জুটবে না নাকি?
মহিষী। সে জন্যে নয় মহারাজ!