বামী। খুব খাঁটি।
মহিষী। খুব কড়া ওষুধ হওয়া চাই এক দিনেই যাতে কাজ হয়। মহারাজ বলেছেন কালকের মধ্যে যদি সুরমা বিদায় না হয় তাহলে উদয়কে সুদ্ধ নির্বাসনে পাঠাবেন। আমি যে কী কপাল করেছিলুম!
বামী। কড়া ওষুধ তো বটে। বড়ো ভয় হয় মা, কী হতে কী ঘটে।
মহিষী। ভয়ভাবনা করবার সময় নেই বামী! একটা কিছু করতেই হবে। মহারাজকে তো জানিস-কেঁদেকেটে মাথা খুঁড়ে তাঁর কথা নড়ানো যায় না। উদয়ের জন্যে আমি দিনরাত্রি ভেবে মরছি। ওই বউটাকে বিদায় করতে পারলে তবু মহারাজের রাগ একটু কম পড়বে। ও যেন ওঁর চক্ষুশূল হয়েছে।
বামী। তা তো জানি। কিন্তু ওষুধের কথা তো বলা যায় না। দেখো, শেষকালে মা আমি যেন বিপদে না পড়ি। আর আমার বাজুবন্দর কথাটা মনে রেখো।
মহিষী। সে আমাকে বলতে হবে না। তোকে তো গোটছড়াটা আগাম দিয়েছি।
বামী। শুধু গোট নয় মা, বাজুবন্দ চাই।
[প্রস্থান
উদয়াদিত্যের প্রবেশ
মহিষী। বাবা উদয়, সুরমাকে বাপের বাড়ি পাঠানো যাক!
উদয়াদিত্য। কেন মা, সুরমা কী অপরাধ করেছে?
মহিষী। কী জানি বাছা, আমরা মেয়েমানুষ কিছু বুঝি না, বউমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে মহারাজার রাজকার্যের যে কী সুযোগ হবে, মহারাজই জানেন।
উদয়াদিত্য। মা, রাজবাড়িতে যদি আমার স্থান হয়ে থাকে তবে সুরমার কি হবে না? কেবল স্থানটুকুমাত্রই তার ছিল, তার বেশি তো আর কিছু সে পায় নি!
মহিষী। ( সরোদনে) কী জানি বাবা, মহারাজ কখন কী যে করেন কিছুই বুঝতে পারি নে। কিন্তু তাও বলি বাছা, আমাদের বউমা বড়ো ভালো মেয়ে নয়। ও রাজবাড়িতে প্রবেশ করে অবধিই এখানে আর শান্তি নেই। হাড় জ্বালাতন হয়ে গেল। তা, ও দিনকতক বাপের বাড়িতেই যাক না কেন, দেখা যাক— কী বল বাছা? ও দিনকতক এখান থেকে গেলেই দেখতে পাবে, বাড়ির শ্রী ফেরে কি না।
[ উদয় নীরব থাকিয়া কিয়ৎকাল পরে প্রস্থান
সুরমার প্রবেশ
সুরমা। কই এখানে তো তিনি নেই।
মহিষী। পোড়ামুখী, আমার বাছাকে তুই কী করলি? আমার বাছাকে আমায় ফিরিয়ে দে। এসে অবধি তুই তার কী সর্বনাশ না করলি? অবশেষে— সে রাজার ছেলে— তার হাতে বেড়ি না দিয়ে কি তুই ক্ষান্ত হবি নে?
সুরমা। কোনো ভয় নেই মা। বেড়ি এবার ভাঙল। আমি বুঝতে পারছি আমার বিদায় হবার সময় হয়ে এসেছে— আর বড়ো দেরি নেই। আমি আর দাঁড়াতে পারছি নে। বুকের ভিতর যেন আগুনে জ্বলে যাচ্ছে। তোমার পায়ের ধুলো নিতে এলুম। অপরাধ যা কিছু করেছি মাপ করো। ভগবান করুন যেন আমি গেলেই শান্তি হয়।
[ পদধূলি লইয়া প্রস্থান