সে বিদ্যাও ছুটে যায় স্বপ্নের মতন।
বিক্রমদেব। না না, ভয় নাই, সখা, মৌন রহিলাম —
তোমার নূতন বিদ্যা বলে যাও তুমি।
দেবদত্ত। শুন তবে — বলিছেন কবি ভর্তৃহরি —
‘নারীর বচনে মধু, হৃদয়েতে হলাহল,
অধরে পিয়ায় সুধা, চিত্তে জ্বালে দাবানল। ’
বিক্রমদেব। সেই পুরাতন কথা!
দেবদত্ত। সত্য পুরাতন।
কী করিব মহারাজ, যত পুঁথি খুলি
ওই এক কথা। যত প্রাচীন পণ্ডিত
প্রেয়সীরে ঘরে নিয়ে এক দণ্ড কভু
ছিল না সুস্থির। আমি শুধু ভাবি, যার
ঘরের ব্রাহ্মণী ফিরে পরের সন্ধানে
সে কেমনে কাব্য লেখে ছন্দ গেঁথে গেঁথে
পরম নিশ্চিন্ত মনে?
বিক্রমদেব। মিথ্যা অবিশ্বাস।
ও কেবল ইচ্ছাকৃত আত্মপ্রবঞ্চনা।
ক্ষুদ্র হৃদয়ের প্রেম নিতান্ত বিশ্বাসে
হয়ে আসে মৃত জড়বৎ, তাই তারে
জাগায়ে তুলিতে হয় মিথ্যা অবিশ্বাসে।
হেরো ওই আসিছেন মন্ত্রী, স্তূপাকার
রাজ্যভার স্কন্ধে নিয়ে। পলায়ন করি।
দেবদত্ত। রানীর রাজত্বে তুমি লও গে আশ্রয়।
ধাও অন্তঃপুরে। অসম্পুর্ণ রাজকার্য
দুয়ার-বাহিরে পড়ে থাক্, স্ফীত হোক
যত যায় দিন। তোমার দুয়ার ছাড়ি
ক্রমে উঠিবে সে ঊর্ধ্বদিকে, দেবতার
বিচার-আসন-পানে।
বিক্রমদেব। এ কি উপদেশ?
দেবদত্ত। না রাজন্, প্রলাপ-বচন। যাও তুমি,
কাল নষ্ট হয়।