দেবদত্তের গৃহ
দেবদত্ত। প্রিয়ে, বলি ঘরে কিছু আছে কি?
নারায়ণী। তোমার থাকার মধ্যে আছি আমি। তাও না থাকলেই আপদ চোকে।
দেবদত্ত। ও আবার কী কথা!
নারায়ণী। তুমি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে যত রাজ্যের ভিক্ষুক জুটিয়ে আন, ঘরে খুদকুঁড়ো আর বাকি রইল না। খেটে খেটে আমার শরীরও আর থাকে না।
দেবদত্ত। আমি সাধে আনি? হাতে কাজ থাকলে তুমি থাক ভালো, সুতরাং আমিও ভালো থাকি। আর কিছু না হোক, তোমার ঐ মুখখানি বন্ধ থাকে।
নারায়ণী। বটে? তা আমি এই চুপ করলুম। আমার কথা যে তোমার অসহ্য হয়ে উঠেছে তা কে জানত! তা, কে বলে আমার কথা শুনতে —
দেবদত্ত। তুমিই বল, আবার কে বলবে? এক কথা না শুনলে দশ কথা শুনিয়ে দাও।
নারায়ণী। বটে! আমি দশ কথা শোনাই? তা, আমি এই চুপ করলুম। আমি একেবারে থামলেই তুমি বাঁচ। এখন কি আর সেদিন আছে — সেদিন গেছে। এখন আবার নতুন মুখের নতুন কথা শুনতে সাধ গিয়েছে — এখন আমার কথা পুরোনো হয়ে গেছে।
দেবদত্ত। বাপ রে! আবার নতুন মুখের নতুন কথা! শুনলে আতঙ্ক হয়। তবু পুরোনো কথাগুলো অনেকটা অভ্যেস হয়ে এসেছে।
নারায়ণী। আচ্ছা বেশ। এতই জ্বালাতন হয়ে থাক তো আমি এই চুপ করলুম। আমি আর একটি কথাও কব না। আগে বললেই হত — আমি তো জানতুম না। জানলে কে তোমাকে —
দেবদত্ত। আগে বলি নি? কত বার বলেছি। কই, কিছু হল না তো।
নারায়ণী। বটে! তা বেশ, আজ থেকে তবে এই চুপ করলুম। তুমিও সুখে থাকবে, আমিও সুখে থাকব। আমি সাধে বকি? তোমার রকম দেখে —
দেবদত্ত। এই বুঝি তোমার চুপ করা?
নারায়ণী। আচ্ছা। [বিমুখ
দেবদত্ত। প্রিয়ে! প্রেয়সী! মধুরভাষিণী! কোকিলগঞ্জিনী!
নারায়ণী। চুপ করো।
দেবদত্ত। রাগ কোরো না প্রিয়ে, কোকিলের মতো রং বলছি নে, কোকিলের মতো পঞ্চমস্বর।
নারায়ণী। যাও যাও, বোকো না। কিন্তু তা বলছি, তুমি যদি আরো ভিখিরি জুটিয়ে আন তাহলে হয় তাদের ঝেঁটিয়ে বিদেয়