অমাত্য। বিচারের আজ্ঞা হোক।
বিক্রমদেব। কিসের বিচার?
অমাত্য। শুনি নাকি, মহারাজ, নির্দোষীর নামে
মিথ্যা অভিযোগ —
বিক্রমদেব। সত্য হবে। কিন্তু যতক্ষণ
বিশ্বাস রেখেছি আমি তোমাদের 'পরে
ততক্ষণ থাকো মৌন হয়ে। এ বিশ্বাস
ভাঙিবে যখন, তখন, আপনি আমি
সত্য মিথ্যা করিব বিচার। যাও চলে।
বিক্রমদেব। হায় কষ্ট মানব-জীবন! পদে পদে
নিয়মের বেড়া! আপন রচিত জালে
আপনি জড়িত। অশান্ত আকাঙ্ক্ষা-পাখি
মরিতেছে মাথা খুঁড়ে পঞ্জরপিঞ্জরে!
কেন এ জটিল অধীনতা? কেন এত
আত্মপীড়া? কেন এ কর্তব্য-কারাগার?
তুই সুখী অয়ি মাধবিকা, বসন্তের
আনন্দমঞ্জরী! শুধু প্রভাতের আলো,
নিশার শিশির, শুধু গন্ধ, শুধু মধু,
শুধু মধুপের গান, বায়ুর হিল্লোল,
স্নিগ্ধ পল্লবশয়ন, প্রস্ফুট শোভায়
সুনীল আকাশ-পানে নীরবে উত্থান,
তার পরে ধীরে ধীরে শ্যাম দূর্বাদলে
নীরবে পতন। নাই তর্ক, নাই বিধি,
নিদ্রিত নিশায় মর্মে সংশয়-দংশন,
নিরাশ্বাস প্রণয়ের নিষ্ফল আবেগ।
এসেছ পাষাণী! দয়া হয়েছে কি মনে?
হল সারা সংসারের যত কাজ ছিল!