দেবদত্তের কুটির
দেবদত্ত। প্রিয়ে, তবে অনুমতি করো — দাস বিদায় হয়।
নারায়ণী। তা যাও-না, আমি তোমাকে বেঁধে রেখেছি না কি?
দেবদত্ত। ঐ তো, ঐজন্যেই তো কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না — বিদায় নিয়েও সুখ নেই। যা বলি তা করো। ঐখানটায় আছাড় খেয়ে পড়ো। বলো, হা হতোহস্মি, হা ভগবতি ভবিতব্যতে! হা ভগবন্ মকরকেতন!
নারায়ণী। মিছে বকো না। মাথা খাও, সত্যি করে বলো, কোথায় যাবে?
দেবদত্ত। রাজার কাছে।
নারায়ণী। রাজা তো যুদ্ধু করতে গেছে। তুমি যুদ্ধু করবে নাকি? দ্রোণাচার্য হয়ে উঠেছ?
দেবদত্ত। তুমি থাকতে আমি যুদ্ধ করব? যা হোক, এবার যাওয়া যাক।
নারায়ণী। সেই অবধি তো ঐ এক কথাই বলছ। তা যাও-না। কে তোমাকে মাথার দিব্যি দিয়ে ধরে রেখেছে?
দেবদত্ত। হায় মকরকেতন, এখানে তোমার পুষ্পশরের কর্ম নয় — একেবারে আস্ত শক্তিশেল না ছাড়লে মর্মে গিয়ে পৌঁছয় না। বলি ও শিখরদশনা, পক্কবিম্বাধরোষ্ঠী, চোখ দিয়ে জল-টল কিছু বেরোবে কি? সেগুলো শীঘ্র শীঘ্র সেরে ফেলো — আমি উঠি।
নারায়ণী। পোড়া কপাল! চোখের জল ফেলব কী দুঃখে? হাঁ গা, তুমি না গেলে কি রাজার যুদ্ধু চলবে না? তুমি কি মহাবীর ধূম্রলোচন হয়েছ?
দেবদত্ত। আমি না গেলে রাজার যুদ্ধ থামবে না। মন্ত্রী বার বার লিখে পাঠাচ্ছে রাজ্য ছারখারে যায় কিন্তু মহারাজ কিছুতেই যুদ্ধ ছাড়তে চান না। এ দিকে বিদ্রোহ সমস্ত থেমে গেছে।
নারায়ণী। বিদ্রোহই যদি থেমে গেল তো মহারাজ কার সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবেন?
দেবদত্ত। মহারানীর ভাই কুমারসেনের সঙ্গে।
নারায়ণী। হাঁ গা, সে কী কথা! শ্যালার সঙ্গে যুদ্ধ? বোধ করি রাজায় রাজায় এইরকম করেই ঠাট্টা চলে। আমরা হলে শুধু কান মলে দিতুম। কী বল?
দেবদত্ত। বড়ো ঠাট্টা নয়। মহারানী কুমারসেনের সাহায্যে জয়সেন ও যুধাজিৎকে যুদ্ধে বন্দী করে মহারাজের কাছে নিয়ে আসেন। মহারাজ তাঁকে শিবিরে প্রবেশ করতে দেন নি।
নারায়ণী। হাঁ গা, বল কী! তা তুমি এতদিন যাও নি কেন। এ খবর শুনেও বসে আছ? যাও, যাও, এখনি যাও। আমাদের রানীর মতো অমন সতীলক্ষ্মীকে অপমান করলে? রাজার শরীরে কলি প্রবেশ করেছে।
দেবদত্ত। বন্দী বিদ্রোহীরা রাজাকে বলেছে — মহারাজ, আমরা তোমারই প্রজা — অপরাধ করে থাকি তুমি শাস্তি দেবে। একজন বিদেশী এসে আমাদের অপমান করবে এতে তোমাকেই অপমান করা হল — যেন তোমার নিজ রাজ্য নিজে শাসন করবার ক্ষমতা নেই। একটা সামান্য যুদ্ধ, এর জন্যে অমনি কাশ্মীর থেকে সৈন্য এল, এর চেয়ে উপহাস আর কী হতে পারে। এই শুনে