যতীন। ডাক্তার কী বলেছে, সে কথা কি সে—
মাসি। তা সে নাই জানলে। চোখে তো দেখতে পাচ্ছে। সেদিন বাপের বাড়ি যাবার কথা যেমনি একটু ইশারায় বলা, অমনি বউ কেঁদে অস্থির।
যতীন। সত্যি মাসি, বউ কাঁদলে? সত্যি? তুমি দেখেছ?
মাসি। যতীন, উঠিস্ নে উঠিস্ নে, শো। ঐ যাঃ, ভাঁড়ার ঘর বন্ধ করতে ভুলে গেছি— এখনই ঘরে কুকুর ঢুকবে। আমি যাই, তুমি একটু ঘুমোও যতীন।
যতীন। আমি এইবার ঠিক ঘুমোব, তুমি ভেবো না। কেবল একটা কথা— গৃহপ্রবেশের শুভদিন ঠিক করে দাও।
মাসি। কী বলছিস যতীন, তোর এ অবস্থায়—
যতীন। তোমরা বিশ্বাস করতে পার না— আমার মন বলছে, গৃহপ্রবেশের দিন এল ব’লে। আমি যেতে পারব, নিশ্চয় যেতে পারব। এইবেলা থেকে সব প্রস্তুত করোগে। তখন যেন আবার দেরি না হয়।
মাসি। তা হবে, হবে, কিছু ভাবিস্ নে।
যতীন। মণিকেও এইবেলা বলে রাখো। তারও তো কাজ আছে?
মাসি। আছে বৈকি যতীন, আছে।
যতীন। তুমি আমাদের দুজনকে বরণ করে নেবে।— আচ্ছা মাসি, আমার একটা প্রশ্ন মনে আসে, ভয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারি নে। তুমি বলতে পার? পাটের বাজার কি এর মধ্যে চড়েছে।
মাসি। ঠিক তো জানি নে। অখিল কী যেন বলছিল।
যতীন। কী, কী, কী বলছিল। তোমাকে ভয় দেখাতে ইচ্ছে করে না, কিন্তু এ কথা নিশ্চয়, যদি বাজার না চড়ে থাকে তা হলে—
মাসি। কী আর হবে।
যতীন। তা হলে আমার এ বাড়ি— এক মুহূর্তে হয়ে যাবে মরীচিকা। ঐ-যে, ঐ-যে, আমাদের আড়তের গোমস্তা। নরহরি, নরহরি—
মাসি। যতীন, চেঁচিয়ো না, মাথা খাও, স্থির হয়ে শোও। আমি যাচ্ছি, ওর সঙ্গে কথা কয়ে আসছি।
যতীন। আমার ভয় হচ্ছে, যেন— মাসি, যদি বাজার খারাপই হয়, তুমি অখিলকে ব’লে কোনোরকম করে—
মাসি। আচ্ছা, অখিলের সঙ্গে কথা কব। তুই এখন—
যতীন। জান, মাসি? আমি যে টাকা ধার নিয়েছিলুম সে অখিলেরই টাকা অন্যের নাম করে—
মাসি। আমিও তাই আন্দাজ করেছি।
যতীন। কিন্তু দেখো, নরহরিকে তুমি আমার কাছে আসতে দিয়ো না— আমার ভয় হচ্ছে পাছে কী ব’লে বসে। আমি সইতে পারব না, তুমি ওকে অখিলের কাছে নিয়ে যাও।
মাসি। তাই যাচ্ছি—
যতীন। তোমার কাছে পাঁজিটা যদি থাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো তো।
মাসি। এখন পাঁজি থাক্, তুই ঘুমো।