অন্ধকার রাখিয়াছে বেঁধে।
কুমারসেন। সারা রাত্রি
জেগে বসে আছ, বোন, ঘুম নেই চোখে?
সুমিত্রা। জাগিয়াছি দুঃস্বপন দেখে। সারা রাত
মনে হয় শুনি যেন পদশব্দ কার
শুষ্ক পল্লবের 'পরে। তরু-অন্তরালে
শুনি যেন কাহাদের চুপিচুপি কথা,
বিজন মন্ত্রণা। শ্রান্ত আঁখি যদি কভু
মুদে আসে, দারুণ দুঃস্বপ্ন দেখে কেঁদে
জেগে উঠি। সুখসুপ্ত মুখখানি তব
দেখে পুন প্রাণ পাই প্রাণে।
কুমারসেন। দুর্ভাবনা
দুঃস্বপ্নজননী। ভেবো না আমার তরে
বোন! সুখে আছি। মগ্ন হয়ে জীবনের
মাঝখানে, কে জেনেছে জীবনের সুখ?
মরণের তটপ্রান্তে ব'সে, এ যেন গো
প্রাণপণে জীবনের একান্ত সম্ভোগ।
এ সংসারে যত সুখ, যত শোভা, যত
প্রেম আছে, সকলি প্রগাঢ় হয়ে যেন
আমারে করিছে আলিঙ্গন। জীবনের
প্রতি বিন্দুটিতে যত মিষ্ট আছে, সব
আমি পেতেছি আস্বাদ। ঘন বন,
তুঙ্গ শৃঙ্গ, উদার আকাশ, উচ্ছ্বসিত
নির্ঝরিণী — আশ্চর্য এ শোভা। অযাচিত
ভালোবাসা অরণ্যের পুষ্পবৃষ্টি-সম
অবিশ্রাম হতেছে বর্ষণ। চারিদিকে
ভক্ত প্রজাগণ। তুমি আছ প্রীতিময়ী
শিয়রে বসিয়া। উড়িবার আগে বুঝি
জীবনবিহঙ্গ বিচিত্রবরন পাখা
করিছে বিস্তার। – ওই শোনো কাঠুরিয়া
গান গায় — শোনা যাবে রাজ্যের সংবাদ।