যতীন। মণি বাপের বাড়ি যাবার কথায় কাঁদলে? আমার ভারি আশ্চর্য ঠেকছে।
মাসি। এতই বা আশ্চর্য কিসের।
যতীন। ও যে সেই অমরাবতীর উর্বশী যেখানে মৃত্যুর ছায়া নেই— ওকে তোমরা করে তুলতে চাও প্রাইভেট হাঁসপাতালের নার্স?
মাসি। যতীন, ওকে কি তুই কেবল ছবির মতোই দেখবি। দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবার?
যতীন। তাতে দোষ কী। ছবি পৃথিবীতে বড়ো দুর্লভ। দেখার জিনিসকে দেখতে পাবার সৌভাগ্য কি কম। তা হোক, তুমি বলেছিলে মণি কেঁদেছিল? লক্ষ্মীর আসন পদ্ম, সেও দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সুগন্ধে বাতাসকে কাঁদিয়ে দেয়?
মাসি। মেয়েমানুষ যদি সেবা করতে না পারলে তা হলে—
যতীন। শাজাহানের ঘরে ঘরকরনা করবার লোক ঢের ছিল— তাদের সকলের মধ্যে কেবল একজনকে তিনি দেখেছিলেন যার কিছুই করবার দরকার ছিল না। নইলে তাজমহল তাঁর মনে আসত না। তাজমহলেরও কোনো দরকার নেই। মাসি, আমি সেরে উঠলেই আবার এই বাড়িটি নিয়ে পড়ব। যতদিন বেঁচে থাকি, এই বাড়িটিকে সম্পূর্ণ করে তোলাই আমার একমাত্র কাজ হবে, আমার এই মণিসৌধ। বিধাতার স্বপ্নকে যে আমি চোখে দেখলুম, আমার স্বপ্নকে সাজিয়ে তুলে কেবল সেই খবরটি রেখে যেতে চাই। মাসি, তুমি হয়তো আমার কথা ঠিক বুঝতে পারছ না।
মাসি। তা সত্যি বলছি বাবা, তোদের এ পুরুষমানুষের কথা আমি ঠিক বুঝি নে।
যতীন। এ জানালাটা আরেকটু খুলে দাও।— [ মাসি জানালা খুলিয়া দিলেন] ঐ দেখো, ঐ দেখো, অনাদি অন্ধকারের সমস্ত চোখের জলের ফোঁটা তারা হয়ে রইল।— হিমি কোথায়, মাসি।
সে কি ঘুমোতে গেছে।
মাসি। না, এখনো বেশি রাত হয় নি। ও হিমি, শুনে যা।
যতীন। আমাকে গাইতে বারণ করেছে বলেই বারে বারে তোকে ডাকতে হয়— কিছু মনে করিস্ নে, বোন।
হিমি। না দাদা, তুমি তো জানো, আমার গাইতে কত ভালো লাগে। কোন্ গানটা শুনতে চাও, বলো।
যতীন। সেই যে— আমার মন চেয়ে রয়।
আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে হেরে মাধুরী।
নয়ন আমার কাঙাল হয়ে মরে না ঘুরি।
চেয়ে চেয়ে বুকের মাঝে
গুঞ্জরিল একতারা যে,
মনোরথের পথে পথে বাজল বাঁশুরি,
রূপের কোলে ওই-যে দোলে অরূপ মাধুরী।
কূলহারা কোন্ রসের সরোবরে,
মূলহারা ফুল ভাসে জলের 'পরে।
হাতের ধরা ধরতে গেলে