বন্দনা তোর পুষ্পবনের গন্ধধূপে ;
আজ এসেছ ভুবনমোহন স্বপনরূপে।
হিমি। (নেপথ্যে চাহিয়া) যাচ্ছি দাদা, ভিতরেই যাচ্ছি।
অখিল। কেন ডেকেছ, কাকি।
মাসি। তোকে ডেকে পাঠাবার জন্যে কাল থেকে যতীন আমাকে বারবার অনুরোধ করছে। আর ঠেকিয়ে রাখা গেল না।
অখিল। ওর সেই বাড়িবন্ধকের ব্যাপার নিয়ে?
মাসি। সে কথাটা ওর মনের মধ্যে খুবই আছে, কিন্তু সেটা ও জিজ্ঞাসা করতে চায় না। যতবারই ও-ভাবনাটা ধাক্কা দিচ্ছে ততবারই তাকে সরিয়ে সরিয়ে রাখছে। সে কথা তুমি ওর কাছে কোনোমতেই পেড়ো না— ও-ও পাড়বে না।
অখিল। তবে আমাকে কিসের দরকার পড়ল।
মাসি। উইল করবার জন্যে।
অখিল। উইল? অবাক করলে।
মাসি। জানি, কোনো দরকার ছিল না। কিন্তু মাথার দিব্যি দিচ্ছি, এই কথাটি তোমাকে রাখতেই হবে। ও যাকে যা-কিছু দিতে বলে, সম্ভব হোক অসম্ভব হোক, সমস্তই তোমার ঠিক ঠিক লিখে নেওয়া চাই। হেসো না, প্রতিবাদ কোরো না। তার পরে সে উইলের যা দশা হবে তা জানি।
অখিল। জানি বৈকি। জর্জ দি ফিফ্থের সমস্ত সাম্রাজ্যই আমি যতীনকে দিয়ে উইল করিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নিতে পারি। আমার বিশ্বাস সম্রাটবাহাদুর আন্ডিউ ইন্ফ্লুয়েন্সের অভিযোগ তুলে আদালতে নালিশ রুজু করবেন না। কিন্তু দেখো কাকি, এইবার তোমার সঙ্গে এই বাড়ির কথাটা বলে নিই। আমার মক্কেল—
মাসি। অখিল, এখন দুটো সত্যি কথা কওয়াই যাক। ঘরে-বাইরে কেবলই মিথ্যে বলে বলে দম বন্ধ হয়ে এল। এখন শোনো, তোমার মক্কেল তুমি নিজেই— এ কথা গোড়া থেকেই জানি।
অখিল। সে কী কথা, কাকি!
মাসি। থাক্, ভোলাবার কোনো দরকার নেই। ভালোই করেছ। জানি, আমার সম্পত্তিতে তোমাদেরই অধিকার ব’লে তোমরা বরাবরই তার ’পরে দৃষ্টিপাত করেছ—
অখিল। ছি ছি, এমন কথা—
মাসি। তাতে দোষ কী ছিল বলো। তোমরা আমার ছেলেরই মতো তো বটে। তোমাদেরই সব দিতুম। কিন্তু আমরা দুই বোন ছিলুম। বাবা দিদির উপরে রাগ করে একলা আমাকেই তাঁর সম্পত্তি দিয়ে গেলেন। সে রাগ পড়ে যাবার আগেই তাঁর মৃত্যু হল। স্বর্গে আছেন তিনি, আজ তাঁর সেই রাগ নেই। সেইজন্যেই বাবার সম্পত্তি তাঁরই দৌহিত্রের ভোগে ঢেলে দিয়েছি। লক্ষ্মীর কৃপায় তোমাদের তো কোনো অভাব নেই।
অখিল। তা নিয়ে তোমাকে কি কোনো কথা বলেছি কোনোদিন।
মাসি। বুদ্ধি থাকলে কথা বলবার তো দরকার হয় না। বাড়ি তৈরির নেশায় যতীনকে ধরলে। সে নেশার ভিতরে যে কত অসহ্য দুঃখ তা তোরা পাকাবুদ্ধি আইনওয়ালারা বুঝবি নে। আমি মেয়েমানুষ, ওর মাসি, আমার বুক ফাটতে লাগল। ধার পাব