মাসি। এসেছিল। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। শিয়রের কাছে অনেকক্ষণ ব’সে ব’সে—
যতীন। আশ্চর্য! আমি ঠিক সেই সময়ে স্বপ্ন দেখছিলুম, যেন মণি আমার ঘরে আসতে চাচ্ছে— দরজা অল্প একটু ফাঁক হয়েছে— ঠেলাঠেলি করছে কিন্তু কিছুতেই সেইটুকুর বেশি আর খুলছে না। কিন্তু মাসি, তোমরা একটু বাড়াবাড়ি করছ। ওকে দেখতে দাও যে সন্ধেবেলাকার আলোর মতো কেমন অতি সহজে আমার ধীরে ধীরে—
মাসি। বাবা, তোমার পায়ের উপর এই পশমের শালটা টেনে দিই— পায়ের তেলো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
যতীন। না মাসি, গায়ে কিছু দিতে ভালো লাগছে না।
মাসি। জানিস যতীন, এ শালটা মণির তৈরি— এতদিন রাত জেগে জেগে তোমার জন্যে তৈরি করছিল। কাল শেষ হয়েছে।
যতীন। আমার মনে হচ্ছে যেন ওটা হিমি সেলাই করছিল। মণি তো সেলাই ভালোবাসে না— ও কি পারে।
মাসি। ভালোবাসার জোরে মেয়েমানুষ শেখে। হিমি ওকে দেখিয়ে দিয়েছে বৈকি। ওর মধ্যে ভুল সেলাই অনেক আছে—
যতীন। হিমি, তুই পাখা রাখ্, ভাই। আয় আমার কাছে বোস্। আজই পাঁজি দেখে তোকে বলে দেব কবে গৃহপ্রবেশের লগ্ন আসবে।
হিমি। থাক্ দাদা, ও-সব কথা—
যতীন। আমি উপস্থিত থাকতে পারব না— সেই মনে করে বুঝি— আমি থাকব বোন, সেদিন এ বাড়ির হাওয়ায় হাওয়ায় আমি থাকব— তোরা বুঝতে পারবি। যে গানটা গাবি সে আমি ঠিক করে রেখেছি— সেই, অগ্নিশিখা— একবার শুনিয়ে দে—
অগ্নিশিখা, এসো, এসো,
আনো আনো আলো।
দুঃখে সুখে শূন্য ঘরে
পুণ্যদীপ জ্বালো।
আনো শক্তি, আনো দীপ্তি,
আনো শান্তি, আনো তৃপ্তি,
আনো স্নিগ্ধ ভালোবাসা,
আনো নিত্য ভালো।
এসো শুভ লগ্ন বেয়ে
এসো হে কল্যাণী।
আনো শুভ সুপ্তি, আনো
জাগরণখানি।
দুঃখরাতে মাতৃবেশে
জেগে থাকো নির্নিমেষে,
উৎ সব -আকাশে তব
শুভ্র হাসি ঢালো।