[ ছড়ি লইয়া সতীশ সবেগে চারাগাছগুলিকে ক্রমাগত আঘাত করিতে লাগিল। তাহাতে তাহার উত্তেজনা ক্রমশ আরো বাড়িয়া উঠিতে লাগিল। অবশেষে নিজের হাতকে সবেগে আঘাত করিল, কিন্তু কোনো বেদনা বোধ করিল না, শেষে পকেটের ভিতর হইতে পিস্তল সংগ্রহ করিয়া লইয়া সে হরেনের দিকে সবেগে অগ্রসর হইতে লাগিল। ]
হরেন। (চমকিয়া উঠিয়া) এ কী! দাদা নাকি। তোমার দুটি পায়ে পড়ি দাদা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, কাঁচা পেয়ারা পাড়ছিলুম, বাবাকে বলে দিয়ো না।
সতীশ। (চীৎকার করিয়া) মেসোমশায়, মেসোমশায়, এই বেলা রক্ষা করো, আর দেরি কোরো না — তোমার ছেলেকে এখনো রক্ষা করো।
শশধর। (ছুটিয়া আসিয়া) কী হয়েছে, সতীশ। কী হয়েছে।
সুকুমারী। (ছুটিয়া আসিয়া) কী হয়েছে, সতীশ। কী হয়েছে।
হরেন। কিছুই হয় নি, মা — কিছুই না — দাদা তোমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন।
সুকুমারী। এ কী রকম বিশ্রী ঠাট্টা। ছি ছি, সকলই অনাসৃষ্টি। দেখো দেখি! আমার বুক এখনো ধড়াস- ধড়াস করছে। সতীশ, মদ ধরেছে বুঝি।
সতীশ। পালাও — তোমার ছেলেকে নিয়ে এখনই পালাও! নইলে তোমাদের রক্ষা নেই।
শশধর। সতীশ, অমন উতলা হোয়ো না। ব্যাপারটা কী বলো। হরেনকে কার হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য ডেকেছিলে।
সতীশ। আমার হাত থেকে। (পিস্তল দেখাইয়া) এই দেখো, এই দেখো, মেসোমশায়।
বিধুমুখী। সতীশ, তুই কোথায় কী সর্বনাশ করে এসেছিস বল্ দেখি! আপিসের সাহেব পুলিস সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে খানাতল্লাসি করতে এসেছে। যদি পালাতে হয়, এই বেলা পালা। হায় ভগবান, আমি তো কোনো পাপ করি নি, আমারই অদৃষ্টে এত দুঃখ ঘটে কেন।
সতীশ। ভয় নেই — পালাবার উপায় আমার হাতেই আছে।
শশধর। তবে কি তুমি —
সতীশ। তাই বটে মেসোমশায়, যা সন্দেহ করছ তাই। আমি চুরি করে মাসির ঋণ শোধ করেছি। আমি চোর। মা, তুমি শুনে খুশি হবে, আমি চোর, আমি খুনী! তোমার কীর্তি পুরো হল। এখন আর কাঁদতে হবে না— যাও তুমি, যাও তুমি, যাও যাও, আমার সম্মুখ থেকে যাও। আমার অসহ্য বোধ হচ্ছে।
শশধর। সতীশ, তুমি আমার কাছেও তো কিছু ঋণী আছ, তাই শোধ করে যাও।
সতীশ। বলো কেমন করে শোধ করব। কী আমি দিতে পারি। কী চাও তুমি।
শশধর। ঐ পিস্তলটা।
সতীশ। এই দিলাম। আমি জেলেই যাব। না গেলে আমার পাপের ঋণ শোধ হবে না।
শশধর। পাপের ঋণ শাস্তির দ্বারা শোধ হয় না সতীশ, কর্মের দ্বারাই শোধ হয়। তুমি নিশ্চয় জেনো, আমি অনুরোধ করলে তোমার বড়োসাহেব তোমাকে জেলে দেবেন না। এখন থেকে জীবনকে সার্থক করে বেঁচে থাকো।