কবি। হয়তো পারবে না। একদিন ভাববে ওরাই রথের কর্তা, তখনই মরবার সময় আসবে। দেখো-না, কালই বলতে শুরু করবে, আমাদেরই হাল লাঙল চরকা তাঁতের জয়। যে বিধাতা মানুষের বুদ্ধিবিদ্যা নিজের হাতে গড়েছেন, অন্তরে বাহিরে অমৃতরস ঢেলে দিয়েছেন, তাঁকে গাল পাড়তে বসবে। তখন এঁরাই হয়ে উঠবেন বলরামের চেলা, হলধরের মাতলামিতে জগৎ টা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।
পুরোহিত। তখন আবার রথ অচল হলে বোধ করি কবিদের ডাক পড়বে।
কবি। ঠাট্টা নয় পুরুতঠাকুর! মহাকাল বারেবারেই রথযাত্রায় কবিদের ডেকেছেন। তারা কাজের লোকের ভিড় ঠেলে পৌঁছতে পারে নি।
পুরোহিত। তারা চালাবে কিসের জোরে।
কবি। গায়ের জোরে নয়ই। আমরা মানি ছন্দ, আমরা জানি এক-ঝোঁকা হলেই তাল কাটে। আমরা জানি সুন্দরকে কর্ণধার করলেই শক্তির তরী সত্যি বশ মানে। তোমরা বিশ্বাস কর কঠোরকে — শাস্ত্রের কঠোর বা অস্ত্রের কঠোর — সেটা হল ভীরুর বিশ্বাস, দুর্বলের বিশ্বাস, অসাড়ের বিশ্বাস।
সৈনিক। ওহে কবি, তুমি তো উপদেশ দিতে বসলে, ও দিকে যে আগুন লাগল।
কবি। যুগে যুগে কতবার কত আগুন লেগেছে। যা থাকবার তা থাকবেই।
সৈনিক। তুমি কী করবে।
কবি। আমি গান গাব, ‘ ভয় নেই।'
সৈনিক। তাতে হবে কী।
কবি। যারা রথ টানছে তারা চলবার তাল পাবে। বেতালা টানটাই ভয়ংকর।
সৈনিক। আমরা কী করব।
পুরোহিত। আমি কী করব।
কবি। তাড়াতাড়ি কিছু করতেই হবে এমন কথা নেই। দেখো, ভাবো। ভিতরে ভিতরে নতুন হয়ে ওঠো। তার পরে ডাক পড়বার জন্য তৈরি হয়ে থাকো।